শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৫ মে, ২০২২, ০৫:৩৪ বিকাল
আপডেট : ০৫ মে, ২০২২, ০৫:৩৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কুষ্টিয়ায় ৪ খুনে মামলা দুই ,আসামি ৯৮, গ্রেপ্তার ১১

ফয়সাল চৌধুরী : [২] ঈদ আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। থেমে গেছে সব কোলাহল। স্তব্ধ হয়ে গেছে গ্রামের ঈদ আনন্দ। গ্রামজুড়ে কান্না আর আহাজারি। শোকে বিহ্বল স্বজনরাও। বাবা ও সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় সন্তানরাও। শোকে ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামজুড়ে। এমন চিত্র এখন কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর গ্রামে। গত সোমবার বিকেলে (২ মে) গ্রামটিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান দ্বন্দে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত এবং ১০ জন আহত হন। 

[৩] নিহতরা হলেন, স্থানীয় আস্তানগর গ্রামের বাসিন্দা মৃত: আবুল মালিথার ছেলে আব্দুর রহিম মালিথা (৭০), মৃত: আজিজুল হকের ছেলে মতিয়ার রহমান (৪৫), দাউদ মন্ডলের ছেলে লাল্টু মন্ডল (৪২), এবং মৃত: হোসেন মন্ডলের ছেলে আবুল কাশেম (৬৫) ।  প্রথম একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর সমর্থক। প্রতিপক্ষ  বর্তমান ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের সমর্থক এবং আব্দুর রহিম মালিথা । 

[৪] এঘটনায় নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে ভয়-আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার (০৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আহতরা এখনও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামেই মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

 [৫] এ  বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

[৬] পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে সোমবার  (০২ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর বাজারে কেরামত আলীর সমর্থক আব্দুর রহিম মালিথার সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মেহেদী হাসানের সমর্থকরা রহিমের উপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এসময় লঠির আঘাতে রহিম মাটিতে পরে যায়। 

[৭] এলোপাতাড়িভাবে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে আহত করে। পরিস্থিতি বেগতি দেখে মেহেদী সমর্থকরা স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। রহিমকে মারধরের খবর পেয়ে কেরামত আলীর সমর্থকরা পাল্টা মেহেদী সমর্থকদের উপর হামলা চালালে দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মেহিদীর সমর্থকরা পালিয়ে যায়। কেরামত আলী সমর্থকরা উপর্যুপরি হামলা চালিয়ে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মেহেদী সমর্থক মতিয়ার, লাল্টু ও আবুল কাশেমের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে । পরে সংবাদ পেয়ে ইবি থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪ জনকে মৃত ঘোষনা করেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি আহত ১০ জনের মধ্যে আরও দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

[৮] ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান রতন জানান,স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দের জেরে কেরামত আলীর সমর্থক ও মেহেদী হাসান সমর্থকদের মধ্যে পূর্ব থেকেই উত্তেজনা চলছিল। সোমবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়  থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। প্রথম মামলাটি করেন ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের  এবং আব্দুর রহিম মালিথা সমর্থক এবং নিহত মতিয়ার রহমানের ছেলে আশরাফুল বাদী হয়ে মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ৪। তারিখ : ৪/৪/২০২২। এই মামলায় মোট ৭১ জনকে আসামি করা হয়।

 [৯] দ্বিতীয় মামলাটি করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’ওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর সমর্থক এবং নিহত আব্দুর রহিম মালিথার ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে মামলাটি করেন।  এ মামলায় মোট ২৭ জনকে আসামি করা হয়। দুটি মামলায় মোট ৯৮ জনকে আসামি করা হয়।এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংঘাত এড়াতে আমি নিজে সহ ওই এলাকায় এখন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান কেয়ামত গ্রুপের ৭ জন ও  বর্তমান চেয়ারম্যান মেহেদী গ্রুপের মোট ৪ জন গ্রেপ্তার হয়। এদিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি কেরামত আলীর পরিবারের দাবি বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) দুপুর দুইটার সময় ঝিনাইদহ থেকে র‌্যাব কেরামত আলীকে গ্রেফতার করেছে। 

[১০] এ বিষয়ে জানার জন্য র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার ইলিয়াস খানের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

[১১] নিহত আব্দুর রহিম মালিথার ছেলে রফিকুল  পারিবারের দাবি এর আগে গতকাল বুধবার দহকুলা বাজার থেকে ডিবি পুলিশ রফিকুল কে গ্রেপ্তার করেন। এই বিষয়ে ডিবি পুলিশের (ওসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। 

[১২] উল্লেখ্য নিহত আব্দুর রহিম মালিথার ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। যার মামলা নম্বর ৫, তারিখ ৪/৪/২০২২। এ মামলায় মোট ২৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি। সম্পাদনা : জেরিন 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়