শহীদ বাবা'র পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত হলেন লামিয়া
নিনা আফরিন ,পটুয়াখালী : জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের কবরের পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত হলো মেয়ে লামিয়া।
গতকাল শনিবার (১৬এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর শেখেরটেক ৬নং রোডে ভাড়া বাসায় গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ময়না তদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় লামিয়ার মরদেহ পটুয়াখালীর দুমকিতে পাঙ্গাশিয়া গ্রামে পৌছাইলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বাবা'র কবরের পাশে দাফন করা হয়।
জানায় উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এনসিপি'র মুখ্য সংগঠক (উত্তর অঞ্চল) সারজিস আলম, দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো: ইজাজুল হক, দুমকি থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকির হোসেন, গণঅধিকার পরিষদ উচ্চতর পরিষদ সদস্য কৃষিবিদ মোঃ শহিদুল ইসলাম ফাহিম, পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের আমির এ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান "আমরা বিএনপি পরিবার" - এর আহবায়ক, আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি, পটুয়াখালী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ্ আল নাহিয়ান প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৮ই মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানা বাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন লামিয়া।
তিনি ওই ঘটনার দুইদিন পর গত ২০শে মার্চ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছিলেন । মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামী সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী আদালতের আদেশে কারাগারে রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর পাংগাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে লামিয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। সাহসিকতার সাথে তিনি নিজে থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে দুমকি থানা পুলিশ অভিযুক্ত সাকিব ও সিফাতকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
পরিবারের দাবি, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকেই লামিয়া গভীর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। সামাজিক লজ্জা, অবহেলা এবং ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তার মধ্যে চরম হতাশা তৈরি করে। সেই হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে পরিবারের ধারণা।
লামিয়ার দাদা সোবাহান হাওলাদার(৭২) ও দাদী রাবেয়া বেগম(৬৩) জানান, দেশের জন্য তার ছেলে জুলাই আন্দোলনে জীবন দিয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ ছিলো তার ছেলে জসীম। তাঁকে হারিয়ে তারা চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এরই মাঝে তার নাতী লামিয়াকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষন করে বিএনপি নেতার ছেলে ও তার দলবল। নাতীটা গতকাল গলায় দড়ি দিছে। সে বাধ্য হয়ে গলায় দড়ি দিয়েছে বলে দাবী করেন তারা। যাদের কারনে তার নাতী মরল তারা তাদের কঠিন বিচার দাবী করেন সরকারের কাছে।
এ বিষয়ে দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: জাকির হোসেন জানান,লামিয়া ধর্ষনের ঘটনায় প্রধান আসামীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে।
জেলা বিএনপির একটি সুত্র জানিয়েছে আজ লামিয়ার পরিবারের সাথে দেখা করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পটুয়াখালী আসার কথা রয়েছে " আমরা বিএনপি পরিবার" এর প্রধন উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভীসহ একটি প্রতিনিধি দলের।