সৈকত শতদল, রাজবাড়ী : রোববার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের চর বরাট গ্রামের পদ্মা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিখোঁজের ৩ দিন পর পদ্মা নদী থেকে জিহাদ সরদার (৩০) নামে এক যুবকের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জিহাদ চর বরাট গ্রামের শহিদ সরদারের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জে ঠিকাদারের অধীনে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রীর কাজ করতেন। জিহাদের বোন সামান্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩ টার দিকে আমার ভাই জিহাদ নারায়নগঞ্জ থেকে এসে গোয়ালন্দের জামতলা বাসস্ট্যান্ডে নামে। আমার চাচাতো ভাই সোহাগ তাকে বাইসাইকেলে করে বিকেল ৪ টার সময় বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ি এসে ভাই গোসল করে ভাত খায়। এরপর সোহাগ ও আমার ভাই একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ভাই একাই বাড়িতে আসে। রাতের খাবার খাওয়ার পর রাত ৯ টার দিকে সোহাগ আমার ভাইকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
জিহাদের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোছা. মেঘনা বলেন, রাত ১২ টার দিকে আমি আমার স্বামীকে ফোন করলে সে জানায় যে, সে একটু কাজে আছে; একটু পর বাড়ি আসবেন। পরে রাত ২ টার দিকে ফোন দিলে সে রিসিভ করেনা। আড়াইটার দিকে সে কল ব্যাক করলে আমার শ্বাশুড়ি কথা বলে। শ্বাশুড়ির কাছে সে বলে যে, এক জায়গায় একটু কাজে আছি, একটু পর বাড়িতে আসছি। পরে রাত ৩ টার দিকে আমি আবারও ফোন করলে তার সব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এ ঘটনায় আমরা থানায় জিডি করতে গেলে থানা থেকে জিডি নেয়নি। রোববার সকাল ৮ টার দিকে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীতে স্থানীয়রা মাথাবিহীন লাশ ভাসতে দেখে। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে পড়নের প্যান্ট দেখে আমার স্বামীর লাশ শনাক্ত করি।
জিহাদের মা ফরিদা বোগম বলেন, ২০১৬ সালে আমার চাচাতো ননদ আলেয়ার ছেলে হোমিও চিকিৎসক মোশারফকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই মামলায় আমার স্বামী ও ছেলে জিহাদকে আসামি করা হয়। ওই মামলা এখনো চলমান আছে। মামলার বাদী মোশারফের মামা রশিদ। আমার ধারণা, রশিদ ও তার ভাই শহিদ সোহাগকে দিয়ে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ও পেট ফেড়ে নাড়িভুড়ি বের করে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, নৌপুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। প্রাথমিকভাবে জিহাদের পরিবারের সদস্যরা লাশটি জিহাদের বলে শনাক্ত করেছে। যেহেতু লাশের মাথা পাওয়া যায়নি, তাই ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিআইডি টিম খবর দেওয়া হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টের পর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
ওসির আরও বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহাগ নামে এক যুবককে থানায় আনা হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।