কল্যাণ বড়ুয়া,বাঁশখালী : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকুলীয় সরলে বঙ্গোপসাগরের জেগে উঠা চর যেন অলিখিত এক অর্থের খনি। যেটা দখলে নিতে মরিয়া একের পর এক গ্রুপ। যাদের হাতে রয়েছে অনেক অবৈধ অস্ত্র। যেসব অস্ত্র নিয়ে সময়ে অসময়ে চলে মহড়া।
সোমবার (২২এপ্রিল )বিকালে মনসুর গ্রুপ ও আবুল হোসেন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং ব্যবহার সাধারন জনগন শংকিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় অর্ধশত আহত হলেও বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮জন আহত ও গুলিবিদ্ধ চিকিৎসা গ্রহন করলে তাদের মধ্যে ২৭জনকে চমেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয় ।তবে এ ঘটনায় আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি বলে স্থানীয় একটি সুত্রে জানা যায়। এ ঘটনার সময় আহত হলেও বিগত দিনের মামলা ও নানা অভিযোগের কারণে উপজেলা হাসপাতালে না নিয়ে ব্যক্তিগত ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা যায়।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সবার টনক নড়ে। এর আগে বিগত ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর একই ভাবে সরলে মনসুর গ্রুপ ও আবুল হোসেন দু,গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ১০/১২ গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছিল। সেটা নিয়ে মামলা এবং বেশ কয়েকবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে মীমাসার জন্য বসা হলেও তাকে কার্যত কোন সুরাহা হয়নি। তাছাড়া উপকুলীয় জেগে উঠা চর দখলের ঘটনায় সরলে গ্রুপ উপগ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে বলে সুত্রে জানা যায়।
বাঁশখালী উপকুলীয় সরল এলাকায় জেগে উঠা চর দখলের ঘটনায় যুগের পর যুগ অনেকের প্রাণহানি ও পঙ্গু হওয়ার ঘটনা ঘটলেও সেটা কিছুতেই রোধ হচ্ছে না। দখল বেদখলের ঘটনায় যে কোন একজন মারা গেল অপরজন উঠে নেতৃত্ব দিতে।
বিগত দিনে সরলের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ফেলে র্যাবের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা সহ ক্রসফায়ারে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে সরলের উপকুলে মাওলানা আবুল হোসেন গ্রুপ এবং মো: মনসুর গ্রুপ তাদের প্রভাব চালিয়ে গেলেও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি উপগ্রুপ রয়েছে বলে জানা যায়।
সোমবার বিকালের ঘটনায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার এবং টিনের মানবঘের তৈরি করে সামনে এগিয়ে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের উপর আক্রমনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্রমে ছড়িয়ে পড়লেও সে সব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার কারিদের গ্রেফতার করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সাধারন জনগন।
বঙ্গোপসাগরের সরল উপকুলে জেগে উঠা সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ও মালিকানাধীন কয়েক হাজার একর জমির চিংড়ি ঘের দখল, লবণ মাঠ দখল, বন বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকার প্যারাবনে গাছ কর্তনের ঘটনা প্রায় হয়ে থাকলেও তাতে উপকুলীয় বনবিভাগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনে। সে কারণে উপকুলীয় জেগে উঠা চর দখল বেদখলের ঘটনায় একের পর এক সংগর্ষের ঘটনা হয়ে থাকে স্থানীয় জনগন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান। বিগত দিনে উপকুলীয় এলাকায় চর নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনা, গ্রুপ উপগ্রুপের কোন্দলে আলোচিত জাফর আহমদ, তার ভাই খলিল আহমদ, শেয়ার আলী, জমির, মো: হামিদ সহ ৮/১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
সরল এলাকার বাসিন্দা আমান উল্লাহ বলেন, চর দখল করে অবৈধ টাকার মালিক হওয়া কতিপয় লোকের জন্য সরলের সাধারন জনগন শান্তি ঘুমাতে পারছেনা। প্রতিনিয়ত অস্ত্রের ব্যবহার ও মহড়া দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এটার ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।
সরল এলাকার ব্যবসায়ী আহমদ কবির বলেন, বিগত কয়েকবছর যাবত সরল উপকুলে জেগে উঠা চর দখলে অনেক ঘটনা হলেও তা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসন কেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করে না জানি না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঘটনার ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,বাঁশখালীর উপকুলীয় সরলে সংঘর্ষ কালে যে সব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সে সব ব্যক্তিদের চিহিত করে গ্রেফতার সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা বলে তিনি জানান।