অনুজ দেব বাপু, চট্টগ্রাম: দোর্দন্ড প্রতাপের ব্রিটিশ শাসনের বিশাল ভারতবর্ষে চট্টগ্রামকে ৪ দিন স্বাধীন করে রেখেছিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন অকুতোভয় বিপ্লবী। বিস্মৃতির অতলে চলে যাওয়া আমাদের জাতীয় জীবনের অমূল্য সেই বীরত্বগাঁথা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ৯৫তম বার্ষিকীতে চট্টগ্রামে কবিতা, নৃত্য গান আর কথামালায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সেই শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে গভীর শ্রদ্ধায়।
‘রাস্তা জুড়ে রোদ হোক’ শিরোনামে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে থিয়েটার ইনস্টিউট, চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ উৎসব ২০২৫’ আয়োজন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, চট্টগ্রাম। সংগঠনের দীর্ঘ পথচলায় এটি ছিল তৃতীয়বারের মত আয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কথামালায় অংশ নেন সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সুভাষ দে, কবি ও প্রাবন্ধিক কমলেশ দাশগুপ্ত, কথা সাহিত্যিক ড. আজাদ বুলবুল ও বোধন আবৃত্তি পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল সোহেল। যুব বিদ্রোহের চেতনায় অসা¤প্রদায়িক প্রগতিশীল সমাজ কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘যুব বিদ্রোহ একদিনে আসেনি। বিপ্লবীদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা পরিশ্রম ও জীবন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এটি এক যুগান্তকারী ইতিহাস হিসেবে রচিত হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের চরমতম এই সত্যকে আমরা ভুলতে বসেছি। তবে ইতিহাস সবসময় স্ব মহিমায় উজ্জ্বল। বিপ্লবীরা মরে না, তাঁরা মৃত্যুঞ্জয়ী।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে যাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন সেই মহান শহীদদের আদর্শকে তরুণদের সামনে তুলে ধরতে হবে। যুব বিদ্রোহের চেতনায় অসা¤প্রদায়িক-প্রগতিশীল সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিপ্লবীদের ভুলে যাওয়া যাবে না। নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে গর্বের ইতিহাস।’
কথামালা শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য নিকেতন ও নৃত্যরূপ একাডেমি। দলীয় গানে অংশ নেয় ধ্রুপদ সংগীত নিকেতন।
বোধনের অর্থ সম্পাদক অনুপম শীলের সঞ্চালনায় একক আবৃত্তিতে অংশ নেন বোধনের আবৃত্তিশিল্পী সুবর্ণা চৌধুরী, পল্লব গুপ্ত, সংগীতা কর চৌধুরী, সুচয়ন সেনগুপ্ত, শর্মিলা বড়ুয়া, জলিল উল্লাহ ও ত্রয়ী দে। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। নগরীর দামপাড়া এলাকায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের অস্ত্রাগার দখল করে নেন বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর চারদিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তিন ঘণ্টার সেই যুদ্ধে ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন।