চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীর আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের তিন দফায় হামলার অভিযোগ। এতে ১০ শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন বলে অভিযোগ করেন। হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরা কলেজে এলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে কলেজটিতে এ ঘটনা ঘটে। এদিন সকালে এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ করা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও এনসিপির থানা সংগঠকরাও যান। পরে তাদের ওপরও হামলা করা হয়েছে বলে জানান। বেলা ২টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে সব পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ছিল। এর মধ্যে কলেজে দুই দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। পরে এ হামলার অভিযোগ দিতে আকবর শাহ থানায় গেলে সেখানে আরেক দফায় হামলা করা হয়। বিকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে কলেজ পরিচালনা কমিটির নবনির্বাচিত তিন সদস্য কলেজে আসেন। সে সময় এক নারী শিক্ষককে তারা কলেজে আসতে নিষেধ করেন। ওই নারী শিক্ষক বিষয়টি জানালে তখন শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানান।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নারী শিক্ষককে কলেজ আসতে নিষেধ করেন। সেটির প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সেখানে সিরাজ উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা করেন।
কলেজের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু ছাত্রদল এখানে আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছে। কয়েকজন নারী শিক্ষক এটির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিরাজ উদ্দিন ওই শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছি আমরা। তখন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদলের আকবর শাহ থানা শাখার সদস্য ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘কলেজ পরিচালনা কমিটির ভেতরের বিষয় নিয়ে ওই নারী শিক্ষার্থী সমন্বয়কদের ডেকে আনেন। ছাত্রদল সেখানে ফুল দিতে গিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর পানি নিক্ষেপ করে। হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও এনসিপি বলছে, তারা বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে গেলে তাদের কয়েকজনের ওপর হামলা করেন ছাত্রদলের কর্মীরা। একপর্যায়ে তাদের মারধর করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ শাখার সমন্বয়ক সাজ্জাদুল মাওলা শান্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল ছাত্রদল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।’
তিনি বলেন, ‘নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ করার প্রতিবাদে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করি। সেখানে দুই দফা হামলা করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। হামলার প্রতিবাদে আকবর শাহ থানায় অভিযোগ করতে গেলে সেখানে আরেক দফায় আমাদের ওপর হামলা করা হয়। রাতে থানা এলাকায় সেনাবাহিনীর টিম উপস্থিত হয়। আমরা এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গেও কথা বলেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (চট্টগ্রাম নগর) মুখপাত্র ফাতেমা খানম বলেন, ‘ছাত্রদল আমাদের সহযোদ্ধাদের ওপর হামলা করেছিল। আমরা আকবর শাহ থানায় যাচ্ছি।’
অপরদিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সাগুফতা বুশরা বলেন, ‘আমাদের কোতোয়ালি থানা সংগঠকের ওপর হামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ দিতে আকবর শাহ থানায় গেলে হামলা করে ছাত্রদল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য আরাফাত রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের তিন দফা হামলায় আমাদের দুজন সংগঠকসহ ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হামলায় আমি নিজেও আহত হয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনও শিক্ষককে কলেজ থেকে বের করে দিইনি। এসব বানোয়াট কথা। কাউকে বের করে দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। যারা একসময় ছাত্রলীগ-শিবির করতো, তারা এখন বৈষম্যবিরোধীদের ব্যানারে বিশৃঙ্খলা করছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পাশাপাশি চট্টগ্রামের উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। উৎস: সমকাল ও দেশ টিভি।