শিরোনাম
◈ রাখাইনের গেরিলা কমান্ডার থেকে আঞ্চলিক শক্তি: তোয়ান মারত নাইংয়ের উত্থানের গল্প ◈ ইউক্রেন শান্তিচুক্তি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের: ‘অগ্রগতি না হলে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র’ ◈ ১৪ ঘণ্টা পর ড্রেনে পড়ে যাওয়া নিখোঁজ শিশুর মরদেহ মিলল  ◈ তিন দাবিতে এনসিপির নতুন কর্মসূচি ◈ গাজায় খাদ্য সংকট চরমে, ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৬৪; মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়ালো ◈ তেহরানে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠক: খামেনির কাছে বাদশাহ সালমানের গোপন চিঠি হস্তান্তর ◈ মুরাদনগরে একই দিনে বিএনপি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি জনসভা ঘোষণা, উত্তেজনা চরমে ◈ ব্রাজিলকে নি‌য়ে মেসির আ‌ক্ষেপ ◈ হঠাৎ যে কারণে ইসরায়েলে উড়ে এলো ঝাঁকে ঝাঁকে মার্কিন সামরিক বিমান! ◈ বাংলাদেশে শিক্ষকদের অপমান ও জবরদস্তিমূলক পদত্যাগ: শিক্ষা ব্যবস্থায় অশনি সংকেত

প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:০২ বিকাল
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বংশপরম্পরায় পাওয়া আদি পেশা নিয়ে এখন সংকটে মধুপুরে কুমাররা 

লিয়াকত হোসনে জনী , মধুপুর(টাঙ্গাইল) : বাহারী মাটির তৈরী তৈজসপত্রের গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও বাঙালির সংস্কৃতির সাথে নানা পেশা ধর্ম বর্ণ জাতিগোষ্ঠীর মানুষের রয়েছে  এক নিবিড় সম্পর্ক। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক পার্বন ও পর্বে। আদি বিভিন্ন পেশার মানুষদের নানা আচার অনুষ্ঠান ও তাদের তৈরিকৃত তৈজসপত্র বাঙালির ঐতিহ্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি তাদের পেশাও সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে আধুনিকতার কারণে অনেক লোকেরা তাদের বংশপরম্পরায় লালিত তাদের পেশার টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। পাল পাড়ায় গেল পহেলা বৈশাখে কোন হৈচৈ পড়েনি। নেই তাদের আগ্রহ। কারিগর শ্রমিক আর নিজেদের মজুরি তোলাই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে বৈশাখের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করা হয়ে উঠেনি। শুধু এ বছরই নয়, কয়েক বছর যাবত চলছে তাদের এমন অবস্থা। এসব কারণে জৌলুস হারাচ্ছে তাদের বংশপরম্পরায় পাওয়া এ পেশা। টাঙ্গাইলের মধুপুরের জলছত্র পালপাড়ায় গিয়ে কুমারদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

মধুপুর শহর থেকে ৫- ৬ কিলোমিটার দূরে বেরিবাইদ ও অরণখোলা ইউনিয়নের জলছত্র গ্রামে পালদের ২৪-২৫ পরিবার কুমারদের বসবাস। টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই আনারস বাজারের দু'পাশে ৩০-৩৫ বছর যাবত বাস করছে। পাল পাড়ায় গিয়ে নারী পুরুষদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের বাপদাদার পেশার নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা।

এরা কেউ এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নয়। তাদের পূর্ব পুরুষেরা দুই তিন যুগ আগে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বসতি গড়ে মাটির বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। এভাবে জলছত্র গ্রামে তাদের বসতি। স্থানীয় চাড়ালজানি হাওদাবিলসহ বিভিন্ন বিলের মাটি এনে তারা হাড়ি পাতিলসহ নানা মাটির জিনিসপত্র বানাতো। এক সময় মাটি কিনতে না হলেও এখন কিনে আনতে হয়। শ্রমের মজুরি বেড়েছে।আনুপাতিক হারে বাড়েনি তাদের মাটির জিনিসের দাম। গ্রামে এক সময় তাদের তৈরি মাটির জিনিসপত্রের কদর ও চাহিদা থাকলেও প্লাস্টিকের কারণে চাহিদা কমে গেছে। এখন শুধুই জীবিকা আর বাপদাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতেই এ মাটির করছে এমনটাই জানালেন তারা। তবে তাদের ছেলে মেয়েরা এখন অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। কেউ মিষ্টির দোকানে, কেউ বিপনি কেন্দ্রে। কেউবা আবার দিন মজুরির কাজে। তাদের মতে,বংশপরম্পরার এ পেশাকে টিকিয়ে রাখা এখন তাদের কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আধুনিক মানের মাটির জিনিসপত্র তৈরির প্রশিক্ষণসহ বাজার ব্যবস্থা করতে পারলে বর্তমান সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে পারবে বলেও মনে করছে তারা।

এ গ্রামের সুদেব পাল (৩৫) জানালেন, মাটি কিনে ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতে আগের চেয়ে খরচ অনেক বেশি। গ্রামে গ্রামে বিক্রি করাও কমে গেছে। চাহিদাও কম। সারা দিন ঘুরে ঘুরে বিক্রিত টাকায় পোষানো কঠিন।

পারুল রানী পাল (৩৫)জানালেন, তাদের দুটি এনজিও-র সপ্তাহে কিস্তি।তাই এখন হাড়ি পাতিল পুতুল খেলনা তৈরি না করে শুধু দইয়ের পাতিল তৈরি করে। অর্ডার নিয়ে তৈরি করে। শুধু তিনিই নয় তাদের পাড়ায় সবাই এই একই ধরনের কাজ করে। গেল বৈশাখের জন্য তারা কোন শৌখিন জিনিস পত্র তৈরি করেনি। সুমতি রানী পাল (৬০) জানালেন, নতুন করে কেউ এ কাজ করতে চায় না। যারা পুরানো তারাই এ কাজ করছে।তারমতে, সব পেশার মানুষরা আয় উন্নতি করতে পারলেও তারা পারছে না। হাট বাজারে এ সময় মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা থাকলেও সেখানে এখন প্লাস্টিকের চাহিদা বাড়ছে।

আরতি রানী পাল (৫৯) জানালেন, তারা বংশপরম্পরায় এ কাজ করে ভাসছে। এ সময় তাদের এ গ্রামেও চাক ঘুরিয়ে হাড়ি পাতিল খেলনাসহ বাহারি জিনিসপত্র তৈরি হতো। এখন চাক ঘুরে না। পোষে না তাদের। তাদের মতে, প্রায় সবারই এনজিও-র লোন নিয়েছে,তাদের কারো দুইটা কারো একটা সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা গুণতে হয়। এভাবে কয়েক যুগেও তাদের পেশার কোন গুণগত পরিবর্তন ঘটেনি।

তুলসী রানী পাল জানালেন, এ গ্রামে ২৪-২৫ ঘর কুমারদের সবার অবস্থা এমনই। শিক্ষা দীক্ষায়ও তেমন এগিয়ে যেতে পারেনি।নারী পুরুষদের মধ্যে বয়স্করা এ কাজেই আছে তবে নতুন বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কুমারদের পেশাও টিকে থাকবে এগিয়ে যেতে পারবে তারা। এমনটাই মনে করছে এখানকার কুমার পল্লীর বাসীন্দারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়