নিনা আফরিন,পটুয়াখালী : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আসিকের মৃত্যু ঘিরে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তার সহপাঠীরা। অভিযোগ উঠেছে, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় আসিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) আসিক পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জনতা কলেজ মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলার একপর্যায়ে মাঠসংলগ্ন পুকুরে পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগে দীর্ঘ সময় কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। এমনকি আইসিইউ বিভাগেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ উপস্থিত ছিলেন না। প্রায় ৪০ মিনিট পর চিকিৎসা শুরু হলেও তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পটুয়াখালী শহর ও আশপাশের এলাকা। শিক্ষার্থীরা প্রথমে পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তারা স্বাস্থ্যসেবার চরম অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থীরা মূল ফটকের সামনে এসে বরিশাল-বাউফল সড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীরা লেবুখালী ইউনিভার্সিটি স্কয়ার সংলগ্ন পায়রা সেতুর টোল প্লাজার সামনে অবস্থান নেন এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা দ্রুত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করে দায়ীদের শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান।
বিকেল সাড়ে ৫টায় মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে উপস্থিত হন পবিপ্রবির মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,
“প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমাদের এই ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। একজন শিক্ষার্থীর জীবন আমরা এভাবে হারাতে পারি না। আমি নিজে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন এখন শুধু এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদ নয়, বরং দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের জবাবদিহিতা এবং মানোন্নয়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং যেন আর কোনো আসিক অকালে না হারায়—সেই লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।