ইফতেখার আলম বিশাল : রাজশাহীতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ব্যানারে ছয় দফা দাবিতে রাজশাহী রেলগেটে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। এ সময় রেলগেট এলাকায় পাঁচমুখী যানজটের সৃষ্টি হয়, ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। প্রথম থেকেই ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। অবরোধ শুরুর পরপরই পুলিশ ও সোয়াত বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিত থাকলেও, পরিস্থিতির দীর্ঘস্থায়ী অবনতির আশঙ্কায় পরে সেনাবাহিনীর একটি দল রেলগেটে উপস্থিত হয়। তাদের উপস্থিতিতে দুটি পথ যানবাহন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে বাকি রাস্তাগুলো তখনও অবরোধের আওতায় ছিল।
আন্দোলনকারীদের ছয় দফা দাবির মূল বিষয়বস্তু নিম্নরূপ: ১. অবৈধ পদোন্নতি বাতিল ও পদবি পরিবর্তন: হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধভাবে পদোন্নতি পাওয়া জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরদের রায় বাতিল করতে হবে। একইসাথে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতারাতি নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল ও বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।
২. কারিকুলাম উন্নয়ন ও ভাষার আধুনিকীকরণ: ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি বাতিলের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম প্রণয়ন এবং ভবিষ্যতে একাডেমিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ ইংরেজিতে চালুর দাবি রয়েছে।
৩. সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমাধারীদের অধিকার সংরক্ষণ: উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ও মনোটেকনোলজিতে উত্তীর্ণদের জন্য সংরক্ষিত কোটা নিশ্চিত করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমাধারীদের নিম্নপদে নিয়োগ বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
৪. কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পদে যোগ্যদের নিয়োগ: কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত ব্যক্তিদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দ্রুত প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন: কারিগরি শিক্ষার বৈষম্য দূর এবং দক্ষ জনসম্পদ গঠনের লক্ষ্যে “কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়” নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে।
৬. উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ: পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি, নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তি নিশ্চিত করতে ডুয়েটের আওতায় অস্থায়ী একাডেমিক কার্যক্রম চালুর আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে।