কিবরিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিন ছয়শ্রী গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহীম ও মুক্তা দুজন স্বামী-স্ত্রী। এ জুটি দীর্ঘদিন ধরে কনটেন্ট তৈরী ফেসবুক থেকে আয় করেছেন লাখ লাখ টাকা। ফেসবুকের টাকায় জমি কিনে গড়ে তুলেছেন আলিশান ‘স্বপ্নের বাড়ি”। যা মুক্তার ‘স্বপ্নের বাড়ি’ নামেই পরিচিতি লাভ করে। তবে কনটেন্ট তৈরী করতে গিয়ে বহুবার সমালোচিত হয়েছেন এই জুটি। এতে ফেসবুকে এসে ক্ষমাও চেয়েছেন তারা।
যেখানে সেখানে অশুদ্ধ ভাষা ও নানা অঙ্গ-ভঙ্গিতে কনটেন্ট তৈরী করে আসছিলেন এই জুটি। গত রমজান মাসে পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতিহা ব্যাঙ্গ করে কনটেন্ট তৈরী করেন এই স্বামী-স্ত্রী। এরপর দেশ-বিদেশে শুরু হয় তোলপাড়। এতেই ফেঁসে যান তারা। গত কয়েকদিন ধরে তাদের শাস্তির দাবী উঠে ফেসবুকে। রোববার বিষয়টি চুনারুঘাট থানা পুলিশকে অবগত করেন স্থানীয়রা। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে পুলিশের কাছে জোর দাবী জানানো হয়। এরপর তাদের গ্রেফতার অভিযানে নামে চুনারুঘাট থানা পুলিশ
এদিকে, নিজেদের ফেসবুকে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ইব্রাহীম-মুক্তা। তবুও যেন মিলছে না মুক্তি। তাদের গ্রেফতারে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। অবশেষে পুলিশের অভিযান টের পেয়ে ‘স্বপ্নের বাড়ি’ ছেড়ে পালিয়ে যান ইব্রাহীম-মুক্তা জুটি। গতকাল সংবাদ সংগ্রহ করতে গনমাধ্যম কর্মীরা তাদের বাড়িতে গেলে সামনে গেইট তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। সকালের দিকে ইব্রাহীমের মোবাইল ফোন চালু থাকলেও বিকেলে বন্ধ করে দেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, গত রমজান মাসে পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতিহা ব্যঙ্গ করে একটি কনটেন্ট ভিডিও তৈরী করেন ইব্রাহীম-মুক্তা। গত কয়েকদিন ধরে ওই কনটেন্টের একটি অংশ ভাইরাল হলে অনেকেই কমেন্টবক্সে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। আবার অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট করে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে প্রশাসনের প্রতি আহব্বান জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নামাজের ভান করে ইব্রাহিম ও মুক্তার কথোপকথনে তারা পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতিহা ব্যাঙ্গ করে। ১১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় বসে প্লেইটে চাল কুটছিলেন তার স্ত্রী মুক্তা। এ সময় ইব্রাহীম প্লেইটে ধাক্কা দিয়ে নমাজের দেরী হয়ে যাইতেছে বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান। এসময় মুক্তার হাতের প্লেইট মাটিতে পরে গেলে তিনি বলেন, ‘মা লিকি ইয়ামুদ্দিন’। উত্তরে ইব্রাহীম বলেন, ‘ইয়া খানা বুদু, ওয়াইয়া খানাস্তাকিন, আমি নমাজে যাই’। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, তারা দুজনই উচ্চারণ ভুল ও সুরা ফাতিহা ব্যঙ্গ করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সচেতন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গ্রেফতারের দাবী ও নিন্দার ঝড় উঠে।
এ ব্যাপারে ইব্রাহীমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চুনারুঘাট থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আলম বলেন, ‘তাদের কথোপকথনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আমাদের নজরে আসে এবং এলাকাবাসীও মৌখিকভাবে অবগত করেন। তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে’।