শিরোনাম
◈ আবারও চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ◈ দেশের ৩৫ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান চলছে ◈ ২ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়েছে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ◈ থাইল্যান্ড ভ্রমণে বাধ্যতামূলক হচ্ছে ডিজিটাল অ্যারাইভাল কার্ড ◈ বিচার বিভাগের জন্য দ্রুতই পৃথক সচিবালয়: প্রধান বিচারপতি ◈ জিত‌লো অ্যাস্টন ভিলা, সেমিফাইনালে গে‌লে্া পিএসজি ◈ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫ জেলায় আম পৌঁছে দেবে ডাক বিভাগের ‘স্পিডপোস্ট’ ◈ কারিগরি শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবিতে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ ◈ প্রধান উপদেষ্টার  সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএনপি, ইস্যু নির্বাচনী রোডম্যাপ ◈ পহেলা বৈশাখের মোটিফ বানানো চিত্রশিল্পীর বাড়িতে দুর্বৃত্তদের আগুন, গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে প্রশাসন

প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩৪ বিকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারে লবনের দরপতন, কৃষকদের মাথায় হাত!

হাবিবুর রহমান সোহেল,কক্সবাজার : সমদ্র নগরী কক্সবাজারের উপকূলে বেড়েছে লবণ চাষের জমির পরিমাণ, বেড়েছে চাষিও। যার কারণে চলতি মৌসুমের একমাস বাকি থাকলেও এরই মধ্যে লবণ উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিক টনে।

চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ১৯৮ একর জমিতে লবণ চাষ করছেন ৪১ হাজার ৩৫৫ চাষি। আর দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পর্যন্ত ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু লবণের মূল্য নিয়ে চরম হতাশ চাষিরা।

তাদের দাবি, এখন মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এতে প্রতি মণের বিপরীতে চাষিদের লোকসান হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। এ অবস্থায় ফের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের। আবহাওয়া অনুকুলে; তাই উপকূলে পুরোদমে চলছে লবণ উৎপাদন। যেন মাঠে ব্যস্ততার শেষ নেই লবণ চাষিদের। একদিনই মাঠে লবণ উৎপাদন হচ্ছে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন।

মাঠ পর্যায়ে যতই লবণ উৎপাদন বাড়ছে ততই কমছে লবণের দাম। চাষিরা বলছেন, প্রতিমণ লবণ উৎপাদনের বিপরীতে খরচ হয় ৪’শ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু দফায় দফায় লবণের দাম কমে যাওয়ার কারণে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ লবণ ২৮০-২৬০ টাকা বিক্রি হলে তা এখন নেমে এসেছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সিন্ডিকেট করেই দাম কমিয়ে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ তাদের।

একই সঙ্গে দুষছেন বিসিককেও। লবণচাষিরা বলেন, “করুণ অবস্থা, লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। কারণ ৪৭ কেজি লবণ বিক্রয় করে আমরা ২৫০ গ্রাম মাছ কিংবা ২৫০ গ্রাম মাংস কিনতে পারছি না। এমন অবস্থা এখন লবণচাষিদের।” লবণচাষি ডাঃ সোহেল বলেন, “টেকনাফের লবণ চাষিদের মুখে হাসি নেই। কারণ, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লবণের মাঠ নিয়ে এখন এক মণ লবণে যাতায়াত খরচসহ মিলে পাচ্ছি শুধুমাত্র ১২০ টাকা। যেখানে এক মণে খরচ হচ্ছে ৪০০ টাকা। এ অবস্থায় অনেক চাষি লবণ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” মহেশখালীর লবণচাষি শুভ বলেন, “আমরা বারবার মুক্তবাজার অর্থনীতির একটা রেফারেন্স পায়। যে কারণে কোনোভাবে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করছে না।

ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের জন্য যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেটা হচ্ছে বিসিক। কিন্তু বারবার বিসিকের যে ভূমিকা সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ চাষিদের কল্যাণে আসলে বিসিক কি করছে সেটা আমরা এখনো বুঝতে পারছি না।”লবণ চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে লবণের দামটাই শুধু দরপতন হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লবণের দাম দরপতন হওয়ার পরে, আমরা কি লবণ কম দামে কিনতে পারছি? ইন্ডাস্ট্রি থেকে যে লবণ বের হচ্ছে, ওরা তো ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে লবণ কিনতে হচ্ছে আমাদের। তাহলে ৪ টাকা করে যদি লবণ দরপতন হয়, সে অনুপাতে প্যাকেট লবণের দাম কমলো না কেন।

তিনি আরও বলেন, মিল মালিকরা শুভঙ্কর ফাঁকি দিয়ে মূলত চাষিদেরকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেনো লবণ শিল্পটা উঠে যাই এই চেষ্টা করছে। যাতে লবণ আমদানি নির্ভরশীল হয়ে যাই মিলের মালিকরা সিন্ডিকেট করে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। এরই মধ্যে আরেক দফা লবণ দাম কমায় গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) জরুরী মতবিনিময় সভা করেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তাদের দাবি, সিন্ডিকেট করে লবণ শিল্পকে ধ্বংস করছে মাফিয়া চক্র। এই চক্রকে ভাঙ্গতে পারবে একমাত্র সরকার। আর লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য আরেক দফা আন্দোলনে যাবার ঘোষণা তাদের।

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া বলেন, লবণচাষিদের দাবিগুলো কেনো জানি পূরণ হচ্ছে না। দিন দিন লবণের বাজার নিম্নমুখী। এটার জন্য দায়ী মাফিয়া সিন্ডিকেট লবণ মিল মালিকরা। ৪ টাকায় কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এই সিন্ডিকেটকে ভাঙ্গা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য সরকারই পারে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে। কারণ এরকম কোনে ব্যবসা নেই পৃথিবীতে, ৪ টাকায় কিনে ৫০ টাকা বিক্রি করা। এতো মুনাফা কোথাও নেই। আমরা আশা করব, আমরা আন্দোলনে আছি আন্দোলনে থাকবো। আমরা গতবার খুটাখালিতে লবণ ফেলেছি। বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি যে চাষিদের সাথে মতবিনিময় করব। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার চাইবো। যদি উনাকে বুঝাতে পারি তবে কাজটা দ্রুত হবে, নাহলে আমরা আন্দোলনেই থাকবো।

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহীম বলেন, বিসিক তথ্য দেওয়ার সময় বারবার চাষিদের স্বার্থ দেখে না। দেখে কিছু ফড়িয়া এবং শিল্প মালিক যারা বহুজাতিক কোম্পানির সাথে জড়িত। বিসিক বারবারই তাদের স্বার্থ রক্ষা করে। আমরা অতীতেও দেখেছি বিসিক কখনও এই লবণ চাষিদের সেবাই এগিয়ে আসেনি। তথ্য বিভ্রাট করে ঘাটতি না থাকলেও ঘাটতি দেখিয়ে এভাবে লবণ আমদানি করার জন্য তারা কিছু কুচক্রী মহলের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে পায়তারা চালায় লবণ মৌসুমে। চাষিদের স্বাস্থ্য ও স্বার্থ এগুলো সরকারকে দেখতে হবে।

এদিকে বিসিক বলছে, লবণের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। তবে চাষিদের একসঙ্গে সব লবণ বিক্রি না করে ধাপে ধাপে বিক্রি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, এটা মুক্তবাজার অর্থনীতি, এখানে দাম বেধে দেওয়ার আসলে সুযোগ নেই। এখানে বাজারে যেহেতু সরবরাহ বেশি দেখা যাচ্ছে এজন্য দামটা কমে গেছে। কারণ আমাদের যেটা মজুদ লবণ এটাতো এখন নতুন লবণ রাখার জন্য চাষিরা গর্ত থেকে বের ফেলছে। একইসাথে নতুন লবণও উঠছে যার কারণে সরবরাহটা বেশি আছে। এর ফলে বাজারে মূল্যটা একটু কম। আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি সব লবণ একসাথে বিক্রয় না করে ধাপে ধাপে বিক্রয় করার জন্য। যাতে করে বাজারে সরবরাহের ঘাটতিও না হয় আবার একেবারে অতিরিক্ত সরবরাহও না হয়। তাহলে দামটা একটু উর্ধ্বমুখী অবস্থায় যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়