শিরোনাম
◈ কার স্বার্থ রক্ষায় ‘কালাকানুনে’ আটক মেঘনা! ◈ এবার কালিয়াকৈরে পেপসির কারখানায় হামলার চেষ্টা! ◈ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘোষণা কুয়েট শিক্ষার্থীদের, উত্তেজনা ◈ ৬৭ শতাংশ ঋণ বাড়াবে এডিবি ◈ ভুটা‌নে ফুটবল লিগ খেল‌তে উড়াল দি‌লেন বাংলা‌দে‌শের ৫ নারী খে‌লোয়াড়  ◈ গোল খে‌য়ে পি‌ছি‌য়ে পড়া আল নাসর রোনালদোর জোড়া গোলে জয় পে‌লো  ◈ গোল কর‌তে পা‌রে‌নি বা‌র্সেলোনা, আত্মঘাতী গোলে জয় পে‌য়ে‌ছে তারা   ◈ ইং‌লিশ প্রিমিয়ার লি‌গে এখন পর্যন্ত প্রতিনিধিত্ব করেছে বাংলা‌দেশসহ ১২৬ দেশের ফুটবলার ◈ বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে চায়, জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ◈ মেঘনার সহযোগী সমির সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন, পুলিশের প্রতিবেদন

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:২৫ রাত
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কথিত স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে পরকীয়া প্রেমিককে ডেকে এনে হত্যা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাজ্জাদ ইসলাম সবুজ (২৬) ও সুমাইয়া আক্তার তৃষার (২৬) পরিচয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। আর সেটি তৃষার কথিত স্বামী রোকনুজ্জামান পলাশ জেনে যান। সবুজের বিরুদ্ধে তৃষা ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ তোলার পর পলাশ ও তৃষা মিলে সবুজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

কৌশলে সবুজকে ডেকে নিয়ে এসে হত্যার পর লাশ ৯ টুকরো করে কার্টনে ভরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে ফেলে দেয়। 
রাজধানীর উত্তরার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলা কার্যালয়ে শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কুদরত-ই-খুদা।

এসপি জানান, সাভারের হেমায়েতপুরের মো. ইউসুফ আলীর ছেলে সাজ্জাদ ইসলাম সবুজ ৩ এপ্রিল ভোরে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হন। পরে তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এবং মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় ভিকটিমের বাবা ওই দিনই সাভার মডেল থানায় নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করেন।

পরদিন (৪ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের মালঞ্চ হাসপাতালের পাশে দুটি কার্টনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহের খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়। পরে মুন্সীগঞ্জের মেদিনা মণ্ডল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে একই ধরনের কার্টনে পলিথিন ও স্কচটেপে মোড়ানো অবস্থায় মরদেহের মাথা ও শরীরের কিছু খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়।
মরদেহের খণ্ডগুলো পদ্মা সেতু (উত্তর) ও কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠায়।

পরে সবুজের পরিবারের লোকজন খণ্ডিত মরদেহের মুখ ও হাত-পায়ের অংশ দেখে তাকে শনাক্ত করেন।

ঘটনার দুই দিন পর (৬ এপ্রিল) ভিকটিমের বাবা ইউসুফ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ করে হত্যা মামলা করেন।

এসপি কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘পিবিআই তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। হত্যার পর তৃষা ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিজ গ্রাম ফেনীতে এবং পলাশ চুয়াডাঙ্গার নিজ গ্রামের পাশে খালুর বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেই সঙ্গে তারা চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ এপ্রিল জীবননগর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 এসপি কুদরত বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ এপ্রিল ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত আইফোন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, একটি কার্টন ও লাশ গুমের ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে দুই মাস আগে ভিকটিম সবুজ ও তৃষার পরিচয় হয়। তাদের দুজনেরই ফেক (নকল) আইডি ছিল। পরে তারা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নগ্ন ভিডিও আদান-প্রদান করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে তৃষার কথিত স্বামী পলাশও ফেক আইডি চালাতেন। একপর্যায়ে তৃষা ও সবুজের মধ্যে সম্পর্কের কথা জেনে যান পলাশ। তৃষা পলাশকে জানান, তাকে ব্ল্যাকমেল করে সবুজ এসব করেছেন। পরে পলাশ ও তৃষা মিলে সবুজকে নিয়ে এসে চরম শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তৃষা ঢাকার মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটিতে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করেন। আর পলাশ চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে। ২ এপ্রিল সকালে পলাশ ঢাকায় আসেন। ওই রাতেই নতুন সিম কার্ড কিনে তা তৃষাকে দিয়ে সবুজকে ডাকতে বলেন পলাশ। কথামতো ৩ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তৃষা সবুজকে ফোন করে অনৈতিক কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বছিলার ৪০ ফুট এলাকার পাশের ১০ তলার পলাশের মেসে আসতে বলেন।

সেখানে তিন রুমের একটি ফ্ল্যাটের আলাদা রুমে থাকতেন পলাশ। সবুজ আসার খবরে টয়লেটে লুকিয়ে ছিলেন পলাশ। ওই ফ্ল্যাটে সবুজ আসার পর তৃষা সবুজের ফোন চেক করে নগ্ন ভিডিও খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে লুকিয়ে থাকা পলাশ বের হয়ে সবুজকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন এবং রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে পিঠে ও মাথায় আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পলাশ নিজেও সামান্য জখম হন। পরবর্তীকালে ছুরিকাঘাতে সবুজের মৃত্যু হয়।

লাশের হাত-পা স্কচটেপ দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করলেও রক্তের কারণে তা বাঁধতে পারেননি তারা। পরে মৃতদেহ গুম করতে তৃষার পরামর্শে তারা গ্লাভস পরে লাশ টুকরো টুকরো করে ৯ ভাগ করেন। এরপর সবুজের মোবাইল ফোনটি ভেঙে এবং হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি একটি পলিথিনে ভরে পাশের ডোবায় ফেলে দেন। অন্যদিকে চারটি কার্টনে মরদেহের খণ্ডিত অংশ ভরে দুটি মুন্সীগঞ্জের মেদিনী মণ্ডল এলাকায় এবং দুটি কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের মালঞ্চ হাসপাতালের পাশে প্রাইভেট কার ভাড়া করে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পরিদর্শক জামাল বলেন, ‘তৃষা ও পলাশ স্বামী-স্ত্রী বলে স্বীকার করেছেন। তারা ২০২৩ সালে বিয়ে করেছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও ছেলে ও মেয়ের ফ্যামিলির কেউ সেটি জানেন না। অপরদিকে পলাশের রুমমেটরা জানিয়েছেন পলাশ ও তৃষা প্রেমিক-প্রেমিকা।’

গ্রেপ্তারের পর পলাশ ও তার কথিত স্ত্রী তৃষাকে আদালতে পাঠানো হলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও একই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক জামাল। উৎসধ: কালের কণ্ঠ।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়