কল্যাণ বড়ুয়া, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের চুনতি অভযারণ্য ও বাঁশখালীতে বিগত দিনে ২০ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। কালীপুর রেঞ্জের অধীনে পাহাড়ি কালীপুর,সাধনপুর,পুকুরিয়া এলাকায় ১১টি এবং জলদী রেঞ্জের আওতায় জলদী,চাম্বল,নাপোড়া, পুঁইছড়ি বনবিট এলাকায় ৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে সুত্রে জানা যায়। তার মধ্যে জলদীতে ১টি, চাম্বলে ৩টি,নাপোড়াতে ৪টি এবং পুঁইছড়িতে ১ টি হাতি মিলে বিভিন্ন সময়ে ৯টি হাতি মারা যায় বলে বনবিভাগের কর্মরতদের সুত্রে জানা যায়। এসব হাতি মানব সৃষ্ট বিদ্যুতের ফাঁদ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, অসুস্থতাসহ নানাকারণে মৃত্যু হয়েছে বলে বন বিভাগের তদন্ত ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান।
সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে ১৯৮০ সালে দেশে হাতি ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে জরিপে তা কমে ২৩৯টি হাতি এবং ২০১৬ সালের জরিপে, হাতি ছিল ২৬৮টি। তবে বিগত দিনে চুনতি অভয়ারন্য এলাকাতে বাঁশালীসহ প্রায় একশ হাতি রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে। প্রায় সময় এ সব এলাকাতে ২০২৫ টি হাতি দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় ছোট ছোট বাচ্চাসহ প্রতিনিয়ত হাতির প্রননের ফলে এ সংখ্যা বৃদ্ধি ফেলে হাতি মৃত্যুরর হারও দিন দিন বাড়ছে মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে।
এদিকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুসারে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০২টির বন্য হাতি মারা গেছে বিগত সময়ে। বিভিন্ন সময়ে ১৬টি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে, ৫টি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় হাতি। বন্যপ্রাণী বিভাগ এর মতে ৫৩টি হাতি ‘বার্ধক্যজনিত জটিলতা’ বা হৃদরোগের মতো প্রাকৃতিক কারণে মারা গেছে। ১৭টি হাতি দুর্ঘটনায় মারা গেছে, বাকিগুলোর মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা না হলে ও এসব হাতি হত্যায় ঘটনায় মাত্র ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে অঞ্চলে মানুষ-হাতির সংঘাতে ৪৪ জন মানুষও মারা গেছে।
এদিকে গত বুধবার জলদী রেঞ্জের পাইরাং বিটের আওতায় মসুমার ঝিরি এলাকায় দাঁত ও নখ বিহীন মৃত হাতির পাওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে জলদী রেঞ্জের চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
এতে হাতিটিকে হত্যা করে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ৩৬ (১)(২) ধারা অনুযায়ী অপরাধ মতে বাঁশখালী থানায় দায়ের করা মামলায় বৈলছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব চেচুরিয়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে সরোয়ার হোসেন (৪৮) ও একই এলাকার মো: জাফর (৫২) নামে দুই জনের নাম উল্লেখ করা হয়, আরও অজ্ঞাত ১৫ থেকে ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দীর পরামর্শে মৃত হাতি থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়াতে বন বিভাগের লোকজন যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিহত বন্য হাতিটিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। চুনতি অভযারণ্য রেঞ্জের জলদী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, হাতির খাদ্যের অভাবে প্রায় সময় লোকালয়ে চলে আসে। তাতে জনগন নানা ভাবে তাদের উপর হামলায় এবং ফাঁদ পেতে হত্যা করছে। যা পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন।
তিনি হাতির খাদ্য নিশ্চিত এবং লোকালয়ে যাতে না আসে সে পদক্ষেপ এবং যারা ফাঁদ পেতে হাতি হত্যার মত ঘটনার সাথে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি প্রত্যাশা করেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি হাতির মৃত্যু কিংবা হাতির হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হলে তার সুনিদিষ্টভাবে থানায় সাধারন ডায়েরি কিংবা অভিযোগ করা হয় বলে জানান।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, পাইরাং এর পাহাড়ি এলাকায় হাতি হত্যার পর দাঁত ও নখ কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।