ফরহাদ হোসেন, ভোলা প্রতিনিধি : ভোলায় গত চার দিনে ৩টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। শুক্রবার চরফ্যাশনে, বৃহস্পতিবার ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশায় এবং বুধবার একই উপজেলার ভেলুমিয়ায় পৃথক পৃথক ঘটনায় এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এই ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনা এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাম্প্রতিক এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভোলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত অবনতির দিকে যাচ্ছে কিনা সেটা এখন প্রশ্নের সম্মুখিন। ভোলা সচেতন মহল মনে করছেন দ্রুতই এ পরিস্থিতি থেকে ভোলাবাসীকে উত্তরণের জন্য প্রশাসনকে আরো সজাগ এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।
জানা গেছে, চরফ্যাশন পূর্বের বিরোধের সমঝোতার সালিশে না আসায় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে বাড়িতে গিয়ে মো: মাসুদ (৩৫) নামে এক যুবককে রড ও লাঠি-সোটা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরো ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত মাসুদ চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার আবু বক্করপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মাতাব্বর বাড়ির মো: খালেকের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবরের সদস্যরা জানান, গত বুধবার রাতে আবু বক্করপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ও নিহত মাসুদ এবং তার ভাইদের সাথে মারিমারি হয়। এনিয়ে শুক্রবার সকালে তাদের মধ্যে সমঝোতার সালিশ বসার কথা থাকলেও মাসুদ ও তার পরিবার সেখানে না যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন গংরা। পরে দুপুরের দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন মাসুদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় তারা রড ও লাঠি-সোটা দিয়ে মাসুদ ও তার ভাইদেরসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। পরে স্থানীয়দের সযোগীতায় মাসুদসহ তার আহত ভাইদের উদ্ধার করে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে মাদুস হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
এদিকে ভোলায় জমি দখল করে গোয়ালঘর নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ঈদে বাড়ি আসা এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তফা ভুঁইয়া (৬০)। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে বাদী হয়ে ভোলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশার চর আনন্দ এলাকায় বৃদ্ধ মোস্তাফিজের বাড়ি। তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকার বউবাজার এলাকায় থাকেন। সেখানে রাজ মিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। ঈদে বাড়ি এসে দেখেন প্রতিবেশী শামসুদ্দিন তার জমিতে গরুর গোয়ালঘর করার পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা ফেলছেন। গোয়ালঘর সরিয়ে নিতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শামসুদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন। কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে সঙ্গে মোস্তাফিজকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ সময় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভোলা হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মোস্তাফিজকে বরিশাল রেফার করেন। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে সামছুদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ভোলা সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সামছুদ্দিনকে শনিবার (৫ এপ্রিল) গ্রেপ্তার করেন ভোলা সদর মডেল থানার পুলিশ। ভোলা সদর মডেল থানার ওসি আবু সাহাদাত হাসনাইন আহমেদ পারভেজ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে জমি জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে সালিশদার ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি জামাল উদ্দিন (৬০) কে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকান্ডে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার (২ এপ্রিল) পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভোলা সদর সহকরী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার প্রেস ব্রিফিং এ জানান, গত ১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টায় ভোলা মডেল থানাধীন ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কুঞ্জপট্টি এলাকার স্থানীয় আলমের বাড়ির সামনের রাস্তায় উপর পারিবারিক জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন (৫৫) কে মারধর করে মারাত্মক জখম করে। পরে তাকে ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে এবং উক্ত ঘটনায় আরও ২জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচাজের নেতৃত্বে ডিবি ও ভেলুমিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ রিয়াদ হোসেন (১৯), মোঃ সাকিল (২১), মোঃ আবু সাঈদ খন্দকার (৩৫) ও মোঃ শহিদুল ইসলাম (৫৬) কে গ্রেফতার করে।
অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিং এ জানান তিনি। তিনি আরও জানান, এ হত্যা সংক্রান্ত বিষয়ে বুধবার (২ এপ্রিল) নিহত জামাল উদ্দিনের ছেলে টিটন বাদী হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করে। মামলা নং-০১/২৫। সাম্প্রতিক এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভোলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত অবনতির দিকে যাচ্ছে কিনা সেটা এখন প্রশ্নের সম্মুখিন। ভোলা সচেতন মহল মনে করছেন দ্রুতই এ পরিস্থিতি থেকে ভোলাবাসীকে উত্তরণের জন্য প্রশাসনকে আরো সজাগ থাকতে হবে।
গত ৪ দিনে ভোলায় ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয় নিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ভোলায় গত কয়েক দিনে যে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এটা ডোমেস্টিক ক্রাইম। এগুলো দীর্ঘদিনের জমি-জমা বিরোধের বিষয়। জমি-জমা বিরোধ নিষ্পত্তির সিস্টেমটা ভাল না বিধায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এ সকল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের মধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।