তপু সরকার হারুন : শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্তের আলোচিত বালুদস্যু ‘ডন মাসুদ’ ওরফে ‘বালু মাসুদ’ দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে র্যাবের জালে ধরা পড়েছেন। ৫ এপ্রিল শনিবার রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ তৈরি করে বালু পাচারসহ সাংবাদিকদের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় র্যাব-১৪ তাকে গ্রেফতার করে। পরে রবিবার সকালে তাকে শ্রীবরদী থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হলে এদিনই ২ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী ও ঢেওফা নদীতে কোন বালু মহাল ইজারা না থাকার পরও বালদস্যু মাসুদসহ স্থানীয় একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে আসছিল। সম্প্রতি স্থানীয় কিছু সাংবাদিক মাসুদের অবৈধ বালু উত্তোলনসহ অন্যান্য অপকর্মের খবরের তথ্য সংগ্রহে গেলে মাসুদ নিজে উপস্থিত থেকে তার বাহিনী দিয়ে সাংবাদিকদের গাড়ি ভাঙচুর করে। ওই ঘটনায় মাসুদকে প্রধান আসামি করে শ্রীবরদী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও বালু পাচারের অভিযোগে ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা বালু মহালের ইজারাদারের পক্ষে তার বড় ভাই মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। পরে শনিবার ওইসব মামলায় র্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে মাসুদের গ্রেফতারের পর তার শাস্তির দাবিতে রবিবার সকালে ডিসি উদ্যানের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন শ্রীবরদী উপজেলার অধিবাসী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহাদাত হোসেন জিকু।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সুলতান মাহমুদ, শাকিল, ইসমাইল, শাকিল হাসান, মনিরুজ্জামান মনির, সাজ্জাদ হোসেন, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ওইসময় শতাধিক মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে ব্যারিস্টার শাহাদাত হোসেন জিকু বলেন, শ্রীবরদী উপজেলায় কোন বালু মহাল নেই। সুতরাং এখান থেকে এক ইঞ্চি বালু উত্তোলন করলেও সেটা অবৈধ। বিগত হাসিনা সরকারের পতনের পর বালুখেকোরা দিনে- রাতে পাগলের মতো বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এতে নদীর পাড় ভেঙে স্থানীয়দের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে পুলিশ প্রশাসন, ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কেউই আইনের আওতায় আসছে না। বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এই অবৈধ বালু উত্তোলন যেন বন্ধ হয় আমরা এটাই চাই। সেইসাথে বালু মাসুদসহ যারা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ বলেন, রবিবার সকালে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মাসুদকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করার পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।