শিরোনাম
◈ গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ◈ কে হ‌চ্ছেন ব্রা‌জি‌লের কোচ? ◈ ১০ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা, ১৪৪ ধারাসহ যেসব নির্দেশনা ◈ শুল্ক আরোপ নিয়ে নানা দেশে টানাপোড়েন, অটল অবস্থানে ট্রাম্প ◈ রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরির আশায় ফাঁদে পড়ছেন তরুণেরা! ◈ জাল সনদে কর্মসংস্থান আর নয়, কুয়েত সরকারের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু ◈ মেসির রেকর্ড ছোঁয়া গোলেও জয় পে‌লো না ইন্টার মায়া‌মি ◈ ওয়ান‌ডে বিশ্বকা‌পের বাছাই প‌র্বের প্রস্তুতি ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ ◈ পৃথিবীর প্রথম স্থায়ী সাগরতল গবেষণাগার নির্মাণ করছে চীন ◈ এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, কমেছে তেলের দাম

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:২৪ দুপুর
আপডেট : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সেন্টমার্টিন এখন অন্যরকম

ডেস্ক রিপোর্ট : আগে যেখানে সারা বছর কমবেশি পর্যটক গমনের সুযোগ থাকলেও চলতি মৌসুমে শুধু দুই মাস পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকায় এ দুই মাসে দেশের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে স্থানীয়রা ছাড়া পর্যটকের আনাগোনা নেই। ফলে তুলনামূলক নির্জনতায় নতুনত্ব পেয়েছে সেন্টমার্টিনের প্রকৃতি।

জনশূন্য সৈকতের বালিয়াড়িতে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে লাল কাঁকড়ার। বেড়েছে শামুক-ঝিনুকের বিচরণ। ডালপালা মেলতে শুরু করেছে কেয়াগাছ। সৈকতের কাছেই সাগরের পানিতে দেখা মিলছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের। সৈকতে প্রকৃতির এমন পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন পরিবেশবিদরা।

দ্বীপটিতে বিগত বছরগুলোতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা যাতায়াতের সুযোগ পেতেন। এবার ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস প্রতিদিন ২ হাজার করে পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছেন। ফলে সীমিত পর্যটক গমনাগমনের কারণে দ্বীপের পরিবেশের ভারসাম্য ফিরতে শুরু করেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, পর্যটক যাতায়াত বন্ধের সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফা বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। অপসারিত হয়েছে বর্জ্যরে ৯০ শতাংশই ছিল চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট ও পলিথিন। এ ছাড়া কেউ যাতে প্রবাল-শৈবাল উত্তোলন করতে না পারেন সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জোবাইর বলেন, এ বছর পর্যটন ব্যবসায় তেমন লাভবান না হলেও দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারের যে কোনো ভালো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। সকালে দখা যায় সৈকতে দেখা যায় শামুক-ঝিনুক পড়ে আছে। দেখে ভালো লাগে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাজির হোসেন বলেন, দ্বীপের দ্বিয়ারমাথাসহ দক্ষিণাংশে পাথরের স্তূপে ভরা বিশাল সৈকতে সবুজ প্যারাবন সৃজিত হচ্ছে। লোকজন না থাকায় গাছগুলো দ্রুত মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। স্থানীয় লোকজন যাতে প্যারাবন উজাড় করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনে কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকমের সহকারী প্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, পর্যটক সীমিত করার উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশের উন্নতি ঘটেছে। কঠোর নজরদারির কারণে এ বছর পর্যটন মৌসুমেও সমুদ্র থেকে প্রবাল আহরণ হয়নি। সেন্ট মার্টিনে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, কাঁকড়াসহ ১ হাজার ৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানও এই দ্বীপের বালিয়াড়ি। বিগত কয়েক বছরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ও পরিবেশদূষণের কারণে দ্বীপটি সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।

আর্থিক দুশ্চিন্তায় দ্বীপবাসী : সেন্টমার্টিনের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, দ্বীপে পর্যটক যাতাযাত নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেউ সেন্টমার্টিনমুখী  হচ্ছেন না। আগে জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও ট্রলারে কিছু পর্যটক আসতেন, যারা সমুদ্রযাত্রাকে উপভোগ করতেন।

সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম বলেন, অতীতে দ্বীপে এ রকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বর্ষা মৌসুমে বিশেষ প্রণোদনা না দিলে নানামুখী সংকটে পড়বেন এখানকার বাসিন্দারা। এজন্য আর্থিক সংকটে থাকা মানুষ কিছুটা উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত অবস্থায় আছে। কারণ এ বছর দ্বীপের মানুষ পর্যটন মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আলম আরমান জানান, সরকারের উদ্যোগে আমরা খুশি। তবে কিছু মানুষ কষ্টে আছেন। তারা আর্থিক সংকটে ভুগছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা তেমন ভালো নেই। সেন্টমার্টিনে বিকল্প কর্মসংস্থান গড়ে তোলা জরুরি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের ভ্রমণের শেষ সময় ছিল। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে নিষেধাজ্ঞা চলমান আছে। পরিস্থিতি বুঝে সরকার জনগণের কল্যাণে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়