ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ১৯৮তম ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত
ফারুকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ : উপমহাদেশের ঐতিহাসিক পবিত্র ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে এবারের ঈদের জামাত। ঈদের জামাতকে ঘিরে থাকবে ৫ স্তরের নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হবে ৫ প্লাটুন বিজিবি। উক্ত জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ ট্রিপল টাইটেল এম এ । বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকছেন হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক জোবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।
শনিবার সকাল ১১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী শোলাকিয়া মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান।
এরপর র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান সাংবাদিকদের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিফিং করেন। শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ‘সারাদেশ ও বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা ঈদের নামাজের জন্য আসবেন। তাদের মধ্যে অনেক মুসুল্লি এক থেকে দুইদিন আগে চলে আসেন। তাদের জন্য ৩টি পৃথক স্থানে থাকার সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানগুলো হচ্ছে ঈদগাহ সংলগ্ন আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, শোলাকিয়া কুমুদিনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বাগে জান্নাত নূরানী মাদ্রাসা। তাদের জন্য বিনামূল্যে ইফতার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, যারা ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করবেন, তারা নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারবেন না। কোনো ধরনের ডিভাইস নিয়ে মাঠে আসতে পারবেন না। এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ওয়াচ-টাওয়ারসহ মাঠের আশপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে যেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার অবস্থান করবে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য মুসল্লিদের জন্য ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় ভৈরব পৌঁছাবে বেলা ২টায়। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়।
এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, পুলিশ ও র্যাবের জন্য ৬টি ওয়াচ-টাওয়ার করা হয়েছে। ১১০০ পুলিশ সদস্য নিজস্ব পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বিঘ্নে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি রমজানের প্রথম থেকেই অব্যাহত আছে। সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। মাঠের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় ড্রোনের ব্যবস্থা থাকবে। মাঠের চর্তুদিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মুসুল্লিদের নিরাপত্তায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রত্যেককে সার্চ করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর থাকবে।
র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান জানান, মুসুল্লিদের নিরাপত্তায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে পোশাকে পাশাপাশি সাদা পোশাকেও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নাশকতাকারী, ছিনতানকারী, চাঁদাবাজ, পকেটমার, টিকেট কালোবাজারি ও মলমপার্টিসহ অন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করব। ওয়াচ-টাওয়ার থাকবে, এর মাধ্যমে আমরা সার্ভিলেন্স করব। সন্দেহভাজন ব্যাক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করব। ড্রোন এবং বায়নোকুলার থাকবে। ওয়াচ-টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে যেন যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করতে পারেন। বেশকিছু প্যাট্রোল কার থাকবে, যেগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে।
ট্রেনে করে দূর–দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন এখানে, তাই তাদের নিরাপত্তার জন্য ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে র্যাব মোতায়েন থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো: মাহমুদুল ইসলাম তালুদকদার, র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমাণ্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।