ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর নওদাপাড়া মাছের আড়তে চাঁদাবাজির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এখানে মাছ বিক্রি করলেই তাদের কাছে চাঁদা আদায় করা হয়, আর চাঁদা না দিলে হয় মারপিট ও শারীরিক আক্রমণ। একসময় এই আড়তে চাঁদাবাজি করতেন ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত আলী শাহু। তবে এখন সেই চাঁদাবাজির দায়িত্বে আছেন নাসিম ও জিল্লুর রহমান, যারা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করেন। আড়তে বর্তমানে চাঁদার হারও বেড়েছে—প্রথমে এক হাজার টাকা হলেও এখন দুই হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঈদ আসন্ন থাকায়, একে নতুন করে চাপ বাড়ানো হয়েছে, এবং আড়ৎদারদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক আড়ৎদাররা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এবং তাদের ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, তাদের মাসিক চাঁদার পাশাপাশি এবার ঈদ উপলক্ষে বিশেষ চাঁদা দাবি করা হচ্ছে, যা তারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, যারা এই চাঁদাবাজি করে তারা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতার নাম ব্যবহার করে, আর এ বিষয়ে তাদের কোনো প্রতিকার নেই বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
শুক্রবার রাতে অলকার মোড়ে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক, আশেকে রাসুল মেহের আলীর সাথে কথোপকথন হয়। তিনি জানান, নওদাপাড়া আম চত্বরে অবস্থিত মাছের আড়তে দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করার ঘটনায়, নাসিম এবং জিল্লুর রহমানের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তারা মেহের আলীকে জানান, এই ধরনের চাঁদাবাজি আগেও হত, তবে বর্তমানে কর্মীদের খরচ চালানোর জন্য টাকা প্রয়োজন, তাই তারা এই টাকা সংগ্রহ করছেন।
মেহের আলী এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য কোথায়?” তিনি বলেন, মাছের আড়তে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়া উচিত এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে দলের ভবিষ্যত বিপদে পড়বে। একদিকে দলের কর্মীদের খরচের জন্য চাঁদাবাজির অজুহাত, অন্যদিকে মেহের আলী দলের সুনাম ও ভবিষ্যতের জন্য এই ধরনের কার্যকলাপের বিরোধিতা করছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নাসিম দাবি করেছেন যে, আগে চাঁদা তোলার একটি ব্যবস্থা ছিল, তবে এখন আর কোনো চাঁদা নেয়া হচ্ছে না এবং ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই বক্তব্যে আড়াল রয়েছে বাস্তবতা, কারণ অনেক আড়ৎদাররা জানিয়েছেন তারা এখনও চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং শারীরিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে নওদাপাড়া এলাকার জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলেও কোনো সারা পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোন উত্তর দেননি ফলে তার বক্তব্য অধরা থেকে যায়। এদিকে, নওদাপাড়া মাছ বাজারের আড়ৎদাররা চাচ্ছেন, তাদের কষ্টের কোনো সুরাহা হোক। বাজারের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে, এবং তারা আশা করছেন সরকারের কাছে এই দুর্ভোগের দ্রুত সমাধান আসবে।
এ ঘটনায় মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতাকে ফোন দেওয়া হয় কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।