হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে অর্থোপেডিক চিকিৎসক শাহিন জোয়ারদারের ওপর হামলার ঘটনার জেরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে গত তিনমাস বন্ধ রয়েছে জেলার সকল বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ প্রশিক্ষণ। এতে অনিশ্চিতায় মধ্যে পড়েছে জেলার ৫টি বেসরকারি নার্সিং কলেজের সহ্রসাধিক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে পাঁচটি বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ প্রশিক্ষণ পুর্নবহালের দাবি জানান। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
জানা যায়, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীন আক্তার জোয়ারদার ট্রমা বিভাগ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় বেসরকারি জেড এম নার্সিং কলেজের ইন্টার্ন নার্স শিক্ষার্থী মোত্তাকিনের সাথে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনার জেরে কিছুক্ষণ পরেই শিক্ষার্থী মোত্তাকিন কয়েকজন বহিরাগতদের নিয়ে চিকিৎসক শাহীন জোয়ারদারের ওপর হামলা চালায়। এতে ওই চিকিৎসকের দুটি দাঁত ভেঙে গিয়ে মারাত্বক আহত হয়।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতে কোতয়ালী থানায় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দিলরুবা জেবা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মোত্তকিনের মা ওই হাসপাতালের সিনিয়র নার্স জোবায়দা গুলশান ও বাবা আলমগীর হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি মোত্তাকিনকে গত ১৮ মার্চ রাতে ঢাকার মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।
এরপর থেকে ফরিদপুর ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ, এ্যামাজান নার্সিং কলেজ, জেড এম নার্সিং কলেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএ সালাম নার্সিং ইনিস্টিটিউট ও ফরিদপুর আইডিয়াল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের ৬ মাসের ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার তিনমাস পার হলেও বেসরকারি নার্সিং শিক্ষার্থীরা কোন সমাধান না পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ প্রশিক্ষণ পুর্নবহালের দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
মানবন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, ফরিদপুরের ৭টি নার্সিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোর্স শেষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ মাসের ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ প্রশিক্ষণ করে আসছি। এরমধ্যে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মোত্তাকিন (২০) নামের একজন নার্সিং শিক্ষার্থী ব্যক্তিগতভাবে একজন সিনিয়র চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক জেলার সকল বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠানের ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। এ সময় তারা জেলা প্রশাসক ও মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ও ইন্টার্ণশীপ পুর্নবহালের ব্যবস্থার দাবি জানান।
নীলা খন্দকার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, শাহিন জোয়ারদার স্যারের ওপর অনাকাঙ্খিত ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষীদের বিচারের দাবি করছি। তারপরও একজনের জন্য আমাদের সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। এজন্য আমরা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমাদের পুর্নবহাল না করলে আমাদের সকলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। তাই আমরা আজ রাস্তায় মানবন্ধনে নেমেছি।
আখি আক্তার নামে অপর শিক্ষার্থী বলেন, মোত্তাকিন যে অপরাধ করেছে সেই অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু এতোগুলো শিক্ষার্থীর কি হবে? আমাদের কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? আমরা অনেকে গরীবের সন্তান। অনেকেই আর্থিকভাবে কেউ স্বচ্ছল নয়। আমাদের অন্য কোথাও গিয়ে ইন্টার্ণশীপ করা সম্ভব নয়। মানবন্ধনে ফরিদপুর ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ, এ্যামাজান নার্সিং কলেজ, জেড এম নার্সিং কলেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএ সালাম নার্সিং ইনিস্টিটিউট ও ফরিদপুর আইডিয়াল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।