সাবেক বিএনপি নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মহানগর বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে। তিনি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের শ্বশুর।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের ধান গবেষণা সড়কের একতা লেনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ষাটোর্ধ্ব নারীকে মারধর করা হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৮টার মহানগর বিএনপির সহসভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত এবং ২৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি এসে আক্কেল আলীর সম্পত্তিতে নির্মিত গুদাম ঘরের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভাঙতে শুরু করেন। তারা দেয়ালের একাংশ ভেঙে গুদাম ঘরে ঢুকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যান। খবর পেয়ে আক্কেল আলীর স্ত্রী বুলবুলি বেগম ঘটনাস্থলে আসলে সংঘবদ্ধ লোকজন তাকে মারধর করেন।
বুলবুলি বেগম বলেন, খবর পেয়ে আমি ধান গবেষণা সড়কে আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে আসি। এসে দেখি ফিরোজ কমিশনার দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের গুদাম ঘর ভাঙছে। গুদাম কেন ভাঙছে জানতে চাইলেই লোকজন লেলিয়ে দেন আমাকে মারধর করতে। তারা আমার বুকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেন। ফিরোজ কমিশনার আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙেছে আবার আমাকেও মারধর করেছে।
তিনি বলেন, আমি দুইবার স্ট্রোক করা রোগী। ওদের মারধরে ভেবেছিলাম ঘটনাস্থলেই মারা যাবো। পরে কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করেছে। সেখান থেকে পুলিশ উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
আহতের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক হিরন বলেন, ৫ আগস্টের পরে ফিরোজ কমিশনার আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, টাকা না দিলে আমাদের সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন। আমার বাবার কবরস্থান আছে ওখানে, সেটা ভেঙে ক্লাবঘর বানাবেন। আমরা তার কথায় রাজি না হওয়ায় গতকাল সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। মালামাল যা ছিল তা লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তারা আমার বৃদ্ধা মাকে মারধর করে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেন। তাকে প্রথমে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছে। আমরা তাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।
তার মা কিছুটা সুস্থ হলে থানায় অভিযোগ দেবেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রাইভিউল কবির স্বপন, তার ছেলে শাওন, ২৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিব, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে ৫ আগস্টের পর এলাকায় বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের কথা না শুনলে মারধর ও মালামালের ক্ষতি করা হয়।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ফিরোজ আহমেদ বলেন, এলাকার মানুষের অনেক দিনের দাবি ছিল একতা লেনটি প্রশস্ত করার। কিন্তু আক্কেল আলীর গুদাম ঘরের জন্য সড়ক প্রশস্ত করা যাচ্ছিল না। সিটি করপোরেশন থেকে রাস্তার জমি দখল করে রাখা দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাজের জন্য আমরা শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। আক্কেল আলীর ছেলেরা এসে মারধর করে শ্রমিক ধরে নিয়ে গেছে।
ফিরোজ আহমেদের ভাই রাইভিউল কবির স্বপন বলেন, ধান গবেষণা সড়কের ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে তিন-চার মাস আগে। আক্কেল অলীর ছেলেরা ড্রেনের কাজ করতেই দিচ্ছিলেন না। আজকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করতে গেলে তাদের মারধর করেন। আমাদের দাবি সড়ক প্রশস্ত করতে যারা বাধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সেলিনা বেগম বলেন, আক্কেল আলীর পরিবার তাদের জমি ছাড়াও আরও বেশি জমি দখলে রেখেছিল। সেটা উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন অনেকবার নোটিশ দিয়েছে এবং টেন্ডার দিয়েছেন। সবশেষ শুক্রবার কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে আক্কেল আলীদের দোকানের দক্ষিণ দিকের দেয়ালটি ভেঙে দেয়। এ সময়ে আক্কেল আলীর স্ত্রী এসে ফিরোজ কমিশনারকে থাপ্পড় মারেন। এতে জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠলে মারধরের হাত থেকে তাকে আমি রক্ষা করি।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, সিটি কর্পোরেশন কয়েকদিন ধরেই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রেখেছে। সাধারণত রাতে সিটি করপোরেশন কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায় না। শুক্রবার ২৪নং ওয়ার্ডে আমরা কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালাইনি। যেখানে-সেখানে কারো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না।
মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ধান গবেষণা সড়কে জমি নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে একজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভাঙার খবর শুনেছি। তবে এখনো থানায় কোনো পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সবশেষ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় মহানগর বিএনপির সহসভাপতির পদ থেকে ফিরোজ আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে এর আগেও বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। মূলত ৫ আগস্টের পর তিনি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডসহ রূপাতলী এলাকায় বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তার জামাতা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার হওয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না তিনি।