শিরোনাম
◈ হামজা চৌধুরী ৮ নম্বর জার্সি পরে বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে চান ◈ আদিতমারীতে দোকানের সামনে মাটি ফেলে দোকান দখলের চেষ্টা বিএনপি নেতার ◈ রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ লাখ লাখ রোহিঙ্গার চোখে এখন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন ◈ সাকিবের সঙ্গে তুলনা করা নিয়ে যা বললেন হামজা ◈ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা ◈ ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ ◈ বিএনপিকে এক-এগারো’র মতো মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হচ্ছে: তারেক রহমান ◈ ব্যাংকের ঋণের ২৭ শতাংশ দিতে হবে সিএমএসএমই খাতে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ এবার শেখ হাসিনাকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বিস্ফোরক মন্তব্য!

প্রকাশিত : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৫৩ দুপুর
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লিচুবাগানে মুকুল সংকট, চাষিদের দুশ্চিন্তা

রিয়াদ ইসলাম, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর থেকে চরমিরকামারী পূর্বপাড়ায় প্রায় কয়েক কিলোমিটার রাস্তা। রাস্তার উভয় পাড়ে যতদূর চোখ যায় লিচুর বাগান। ভালো ফলনের আশায় গাছের গোড়াসহ পুরো জমির আগাছা পরিষ্কার করা হয়েছে। কেউ সেচ দিয়েছেন, কেউবা সেচ দেওয়ার অপেক্ষা করছেন। সবুজ ও তামাটে পাতার ফাঁকে উঁকি দিতে শুরু করেছে লিচুর মুকুল। 

সাধারণত মাঘের শেষ সপ্তাহ থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি লিচু গাছে মুকুল আসে। তবে এবার মুকুলের বদলে অধিকাংশ গাছে নতুন পাতা বের হয়েছে। চাষিরা বলছেন, নতুন পাতা বের হওয়া গাছে মুকুল আসার সম্ভাবনা কম। ফলে গতবারের তুলনায় লিচুর ফলন কম হবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন উপজেলার লিচুচাষিরা।

লিচুর রাজ্য বলে খ্যাতি আছে ঈশ্বরদীর। জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে লিচুকে দিয়ে। এখানে চাষ হয় মোজাফফর বা দেশি লিচু, বোম্বাই, এবং চায়না-৩। এছাড়াও, কদমি, কাঁঠালি, বেদানা, চায়না-১, এবং চায়না-২ জাতের লিচু। উপজেলায় প্রায় সব জায়গাতে কম বেশি লিচুর চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় পাকশী ইউনিয়নের নতুন রূপপুর, ছিলিমপুর, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদা, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, ভাড়ইমারী গ্রামে। লিচু চাষের জন্য উপযোগী বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় এ অঞ্চলে লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহও বাড়ছে দিন দিন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হচ্ছে, যেখানে বাগানের সংখ্যা ১১ হাজার ৫টি। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বোম্বাই লিচুর, যা ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এছাড়া চায়না থ্রি জাতের লিচু ৫০ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী জাতের লিচু ৫৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। বসতবাড়ির উঠানে লিচুগাছ তুলনামূলক কম থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে। উপজেলায় লিচু চাষি রয়েছেন ৯ হাজার ৬২০ জন। 

আরও জানা গেছে, উপজেলায় ফলন্ত লিচু বাগানের পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এখানকার লিচু বাজারে বিক্রি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার। গত দুই দিন কয়েকটি লিচুবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে তামাটে রঙের নতুন পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে নাকফুলের মতো মুকুল। মুকুলের হাটে মৌমাছির গান মিলিয়ে যাচ্ছে ফাল্গুনের বাতাসে। গাছের গোড়াকে আগাছামুক্ত করেছেন কৃষক। প্রথম পর্বের পরিচর্যাসহ একবার কীটনাশক ছিটানো (স্প্রে) হয়েছে।

সলিমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর এলাকায় ১১ একর জমিতে ৭০০ গাছ নিয়ে মুক্তার আলমের লিচু বাগান। তিনি জানান, বোম্বাই ও মোজাফফরে এবার মুকুল কম এসেছে। দুই বছর থেকে ফলন কম হচ্ছে বাগানে। এবার নিড়ানি দেওয়া হয়েছে। মুকুল থেকে গুটি বের হলেই সেচ দেওয়া শুরু করবেন। তিনি বলেন, ‘শীত কম হওয়ায় মুকুল ঠিকমতো আসেনি। মুকুল আসার আগেই গাছের পাতা ছেড়ে দিয়েছে। তা ছাড়া একবার ফলন ভালো হলে পরেরবার ফলন একটু কমে যায়।’

বাঁশেবাদা গ্রামের লিটন হোসেন বলেন, ‘৩০ একর জমিতে লিচুবাগান আমাদের। গত বছর প্রায় সব গাছে মুকুল এসেছিল। ফলনও ভালো ছিল। এবার তাড়াতাড়ি সবুজ ও তামাটে পাতা ছেড়ে দিয়েছে গাছগুলো। কিছু ডালে মুকুল আছে, তবে পাতার আধিক্যই বেশি। জানালেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এবার কমপক্ষে ৭০ শতাংশ লিচুর ফলন কম হবে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবেন, যাঁরা আগাম বাগান লিজ নিয়েছেন। গত মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছি।’

সাহাপুর ইউনিয়নের লিচুচাষি আলম রহমান বলেন, বাগানে প্রায় ১০০ গাছ আছে। এর মধ্যে ২৫ গাছে মুকুল এসেছে।  ঈশ্বরদীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচু চাষি শাজাহান আলী বাদশা জানালেন, লিচুর মুকুল গঠনের জন্য সঠিক তাপমাত্রা, পানি ও সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত, মুকুল আসার সময় টানা দুইসপ্তাহ ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা দরকার। কিন্তু এবছর শীত কম থাকায় তা হয়নি। এছাড়া, মুকুলের গুটি শক্ত হওয়ার আগে বেশি সেচ দিলে ফ্লাওয়ারিং হরমোন কমে যায়, আর বৃদ্ধিজনিত হরমোন বেড়ে
যায়। এ কারণে মুকুলের বদলে গাছে সবুজ কচি পাতা গজাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, গত দুই বছর ঈশ্বরদীতে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে এবছর কিছু জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগেরও প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে লিচু চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, আশানুরূপ মুকুল না আসায় এ বছর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে। সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনেই এমনটি হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদীতে প্রায় তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। এ বছরের লিচুর
তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। ফাল্গুন শেষ হওয়ার পর কৃষি বিভাগ যখন গাছের জরিপ করবে তখন সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়