শিরোনাম
◈ অক্সফোর্ড কলেজে শতাব্দীর রীতি: দাস নারীর খুলিতে তৈরি পাত্রে পরিবেশন হতো পানীয়! ◈ বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম: বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরতা বেড়েছে ◈ বাংলাদেশের সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ চুক্তি নবায়ন করবে কাতার ◈ বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১০ ◈ আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন ◈ কুয়েট ভিসির অপসারণের দাবিতে দেড় ঘণ্টা অবরোধের পর কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়ল শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয় ◈ পারভেজ হত্যা: ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে পুলিশ ◈ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: এবার নতুন তথ্য দিলেন ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা ◈ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডিসি নাজমুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

প্রকাশিত : ১৫ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৩৬ দুপুর
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গায়েবি এই মসজিদে যে কোনো মানত করলেই তা পূরণ হবে–এমন বিশ্বাস থেকে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেকেই

মনের আশা পূরণ করতে মানত নিয়ে গায়েবি মসজিদে ছুটে আসেন ভক্তরা। হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগল, গরু, স্বর্ণসহ নগদ টাকা দান করেন এই মসজিদে। রহস্যে ঘেরা এক হাজার বছরের বেশি পুরানো ‘পশ্চিম আশিদ্রোন গায়েবি জামে মসজিদ’ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জিলাদপুর গ্রামে অবস্থিত।

গায়েবি এই মসজিদে যে কোনো মানত করলেই তা পূরণ হবে–এমন বিশ্বাস থেকে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেকেই।

মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান তারা নিজেরাও তাদের বড়দের থেকে যে গল্প শুনেছেন মসজিদকে ঘিরে তাই যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বাস করে আসছেন।

এই মসজিদ ঘিরে রয়েছে প্রাচীন এক ইতিহাস। কথিত আছে পশ্চিম আশিদ্রোন এলাকার লোকজন এক হাজার বছরের বেশি আগে ইবাদত-বন্দেগির জন্য স্থানীয়ভাবে একটি মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগী হন। তখন এ এলাকাটি ছিল পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা। মসজিদ তৈরির উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। তারপরও এলাকার লোকজন সবাই একত্রিত হয়ে এই পাহাড়ি বিলাসছড়া নদীর পাড়ে মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগী হন। কথামতো মসজিদের স্থান নির্ধারণ শেষে ঈশান (ভিত্তিপ্রস্তর) দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় পরদিন যথাযথভাবে মসজিদের কাজ শুরু করা হবে।

তবে পরদিন ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা। খুব ভোরে গ্রামের লোকজন ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান– বিলাসপাড়ে চুন-সুরকি মাখানো একটি অসম্ভব সুন্দর কালচে রঙের তিন গম্বুজের একটি মসজিদ দাঁড়িয়ে আছে। আর আশপাশজুড়ে আগের মতোই রয়েছে ঝোপ-জঙ্গল। এতে এলাকায় হইচই পড়ে যায়। দূর-দূরান্তের লোকজন এসে জড়ো হতে থাকেন। উপস্থিত অনেকেরই তা দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাইতো হাত দিয়ে স্পর্শ করে ছুঁয়ে দেখতে থাকেন অনেকে। আর সেই সময় থেকে স্থানীয়দের ধারণা জন্মে: জিনেরা এক রাতে এই মসজিদ নির্মাণ করেছে। সেই সময় থেকেই এটি সবার কাছে গায়েবি মসজিদ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে।

সরেজমিন দেখা যায়, অতি ছোট আকৃতির পাহাড়ি খরস্রোতা নদী বিলাসছড়া। স্বচ্ছ হালকা জলে ঝিরিঝিরি শব্দে বয়ে চলেছে অনবরত। পাশেই বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে অল্প কদম হাঁটলেই চোখে পড়বে সবুজ রঙের তিন গম্বুজবিশিষ্ট চমৎকার একটি মসজিদ। ১০০০ হাজার খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত পশ্চিম আশিদ্রোন গায়েবি জামে মসজিদ। নান্দনিক স্থাপত্যকলায় নির্মিত গায়েবি এ মসজিদ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে অতি মর্যাদায় অনন্য। মনের সুপ্ত বাসনা পূরণে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন মানত নিয়ে প্রতিদিন ছুটে আসছেন মসজিদে। করছেন নফল ইবাদত।

কথা হয় মসজিদের সানি ইমাম মো. আব্দুস সুবহানের সঙ্গে। তিনি স্মৃতি হাতড়ে বলেন, মূল মসজিদটি ছিল প্রায় তিন শতক জমি নিয়ে। চোখধাঁধানো কারুকাজ আর বিশাল সুউচ্চতায় দাঁড়ানো ছিল মসজিদটি। লোহার রডবিহীন চুন-সুরকি দিয়ে নান্দনিক স্থাপত্যকলায় এটি তৈরি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মসজিদের ডান-বাম পাশ মিলিয়ে মোট ৬টি কাঠের বড় আকৃতির দরজা ছিল। এখনও সেই দরজাগুলো রয়েছে। তবে দরজাগুলো অনেকটা খাটো হয়ে গেছে। দুটি স্টিলের দরজারও একই অবস্থা।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, পাহাড়ি বিলাসছড়ার বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মসজিদের ভিটায় মাটি ফেলে অনেকটা উঁচু করা হয়েছে। এতে মূল সৌন্দর্যে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে উপরের প্রায় ১০ ফুট বাই ১২ ফুট আকৃতির গম্বুজ ৩টির সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়ে যায়নি। এ ছাড়া মসজিদের বাহির ও ভেতরের দেয়ালের গায়ে কিছু কারুকাজ এখনও সেই আগেকার মতো শোভা ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে মসজিদটি ঘিরে হাতের তৈরি নান্দনিক ফুলেল নকশা খুবই চমৎকার দেখার মতো। তবে একাধিক সংস্কারে মসজিদের আদি মূল সৌন্দর্য আর বাকি নেই।

জানা যায়, গায়েবি মসজিদ হওয়ায় সেই সময় কোনো পুকুর ছিল না। মসজিদ নির্মাণের অন্তত ২০০ বছর পর ছয় শতক জমি নিয়ে পুকুর তৈরি করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি প্রায় ৪৫ শতক জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

মসজিদের মুতওল্লি মো. খুরশেদ মিয়া জানান, বর্তমানে মসজিদটিতে ৬০০ থেকে ৭০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। সেই সঙ্গে মসজিদের পাশেই দোতলা একটি মহিলা ইবাদতখানা তৈরি করা হয়েছে। এতে অন্তত দেড়শ মহিলা ইবাদত করতে পারেন। রমজানের সময় মুসল্লিদের ইবাদত-বন্দেগিতে মসজিদটি আরও জমে ওঠে। মাসজুড়ে তারাবি এবং ইফতার ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে।

নান্দনিক স্থাপত্যকলায় নির্মিত এক হাজার বছর বেশি আগের তৈরি ঐতিহ্যবাহী এ গায়েবি মসজিদটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। উৎস: সময়নিউজটিভি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়