কিবরিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামে মোবাইল চুরির অপবাদে এক যুবকের ওপর চালানো হয়েছে পৈশাচিক নির্যাতন। মারধরের পর তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে নির্যাতিত যুবকের পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, গত ৮ মার্চ রাতে যমুনাবাদ গ্রামের আব্দুল কাইয়ূমের বাড়ি থেকে দুইটি মোবাইল চুরি হয়। পরদিন সন্দেহভাজন হিসেবে একই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কিম্মত আলীর ছেলে সহিদুলকে ধরে মারধর করা হয়। তাকে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে জাহেদ মিয়ার নাম বলেন। উত্তেজিত লোকজন কটিয়াদি বাজার থেকে জাহেদকে ধরে এনে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনের টাকা দেওয়ার শর্তে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার (১২ মার্চ) হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ঘটনার দিন রাতে আমাকে ফোন করে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে তারা আমাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়।
এক পর্যায়ে আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। আমি বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তারা আমাকে ছাড়েনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি কখনো চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। মূলত পূর্ব শক্রুতার জেরেই আমার ওপর এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে।’ জাহেদের ছোট বোন পিংকি আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই কোনো অন্যায় করেননি। মানুষকে দুই- একটি ঘুসি বা গালি দিলে সহজেই স্বীকার করে নেয়। অথচ তাকে মেরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরও তিনি চুরির কথা স্বীকার করেননি। যদি তিনি চুরি করতেন, তাহলে অবশ্যই স্বীকার করতেন। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. অনুজ কান্তি দাশ বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।’
জায়েদ মিয়া স্থানীয় কটিয়াদি বাজারের এম মাস্টার্স টেইলার্স ও মোছাব্বির ক্লথ স্টোরে দর্জি হিসেবে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক মোছাব্বির হোসেন বলেন, ‘জাহেদ শান্ত স্বভাবের ছেলে। সে আমার দোকানে দর্জির কাজ করে। তার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।’