জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট : শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গৃহবধূ হাসিনা বেগমকে হত্যা মামলায় পলাতক ঘাতক স্বামী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ একটি দল। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
এর আগে রবিবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা শহরের খুটামারা এলাকার পিংকির মোড় থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁসা কুটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত নওয়াব আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যান চালক।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আসামি নিজেই স্বীকার করেছেন তার দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তাই প্রথম স্ত্রীর সহযোগিতায় আসামি তার ২য় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।
তিনি আরো জানান, পুলিশ জানতে পারে নিহত ২য় স্ত্রীর ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছে। এর মধ্যেই ২য় স্ত্রী তাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করে। সেখানেও তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরে হাসিনা বেগমের সাথে বনিবানা না হওয়ায় ওই স্বামীকে ছেড়ে দেন এবং পুনরায় আশরাফুলকে বিয়ে করে ঘর সংসার করতে থাকেন।
এর পরেই শুরু হয় হাসিনা ও মেহরন দুই সতীনের মধ্যে কলহ। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে যায় আশরাফুল। তাই বড় স্ত্রীকে খুশি করতে ২য় স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে আশরাফুল। তার বড় স্ত্রী মেহরন বেগমের সহযোগিতায় গত ৫মার্চ ২য় স্ত্রীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিজেদের ভ্যানে বাড়ি থেকে বাহির হয় তারা দুজন। ওইদিন তারা লালমনিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।
ঘুরতে ঘুরতেই আশরাফুল কুলাঘাট বাজার থেকে একটি হাসুয়া কিনে নেয়। কিসের এই ধারালো অস্ত্র কেনা হচ্ছে স্ত্রী হাসিনা বেগম জানতে চাইলে ঘাতক স্বামী বলেন বাড়ির কাজে লাগবে বলে নেয়া হলো। সন্ধ্যার দিকে ঘাতক স্বামী আশরাফুল অচেতন করার জন্য হাসিনা বেগমকে পানের সাথে চেতনা নাশক কিছু খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর হাসিনা বেগম অচেতন হয়ে পড়লে রাত ৯টার দিকে তাকে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ এলাকার জনৈক শফিকুলের ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে হাসিনা বেগমকে নিয়ে তার পিছনের দিকে গলায় কোপ দেয় এবং জবাই করে হত্যা করে। পরবর্তিতে লাশটি কেউ যেন চিনতে না পারে এজন্য হাসিনার দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং প্রথম স্ত্রীকে খুশি করতে আশাাফুল হাসিনার বিচ্ছিন্ন মাথাটি প্রথম স্ত্রী মেহরনকে দেখায়। তার পরদিন আশরাফুল বিচ্ছিন্ন মাথাটি ভারতীয় সীমান্তের ৯২৫ নম্বর পিলারের কাছে বাংলাদেশ অংশে একটি তামাকক্ষেতে পুতে রাখে। বড় স্ত্রী মেহরনকে খুশি করতেই তিনি এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আশরাফুল জানিয়েছেন।
প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার আরও জানান, তদন্ত এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ নিহত হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথাটি তার বাড়ির পাশের একটি তামাকক্ষেত থেকে উদ্ধার করে। এরমধ্যে হাসিনা বেগমকে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো রক্তমাখা হাসুয়া, একটি কাঠের বাক্স, রক্তমাখা আশরাফুলের কাপড় ও তাদের ভ্যনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে পুলিশ আশরাফুলের প্রথম স্ত্রী মেহরনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার বলেন, হত্যার মুল রহস্য এবং আরও কিছু তথ্যের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।
এদিকে আজ নিহত হাসিনা বেগমের লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকেলে তার মরদেহ কন্যা চায়না বেগমের নিকট হস্তান্তর করবেন বলেও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।