পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে গত শনিবার রাতে এক বাড়িতে ইজিবাইক চুরির সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে রিফাত বিন সাজ্জাদ (২৩) নামের এক যুবক। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করে, ৫৩ দিন আগে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে সে।
গ্রেফতার রিফাতের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাঝগ্রাম এলাকায়। সে ওই এলাকার আখতার হোসেনের ছেলে। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসী তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত শনিবার রাতে রিফাত আটোয়ারীর রাধানগর এলাকার একটি বাড়িতে ইজিবাইক চুরি করতে যায়। তখন স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ তার ব্যবহৃত মোবাইলে এক নারীকে হত্যার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পায়। এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত জানায়, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ট্রেনে দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড়ে আসার পথে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পথে ওই নারীকে নিয়ে আটোয়ারীতে নামে। ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে সে। শেষে নারীকে হত্যা করে লাশ রেলপথের ওপর ফেলে রাখে। পরদিন ১৪ জানুয়ারি আটোয়ারীর রেলপথে এক নারীর খণ্ড-বিখণ্ড লাশ পাওয়া যায়।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘রিফাতকে গ্রেফতারের পর আটোয়ারী থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে পুলিশ। একটি ধর্ষণের পর হত্যা মামলা, অপরটি ইজিবাইক চুরির মামলা। রবিবার দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এক ব্যক্তি তার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে নিখোঁজ ও অপরহরণের ঘটনায় ভুল্লী থানায় একটি মামলা করেন। পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর রেলপথে উদ্ধার হওয়া লাশটি নিজের মেয়ের ভেবে ময়নাতদন্তের পর নিয়ে দাফন করেন। রিফাতের মোবাইল ফোনে পাওয়া ছবি ও ভিডিও ঠাকুরগাঁওয়ের ওই বাবাকে পাঠালে তিনি জানান, দাফন করা লাশটি তার নিখোঁজ মেয়ের নয়।
গ্রেফতার রিফাত নিহত ওই নারীর নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় ওই নারীর আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি ও পিবিআই। ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সদর উপজেলার ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী ৪ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার পর ওই কিশোরীর বাবা নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ১২ জানুয়ারি তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মেয়েকে অপহরণের মামলা করেন। ১৪ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে ট্রেনে কাটা পড়া খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর সেই লাশ নিজের মেয়ে ভেবে গ্রহণ করেছিলেন। এখন রিফাতকে গ্রেফতারের পর ছবি ও ভিডিও দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে ওই লাশ তাদের মেয়ের নয়।’
ওসি আরও বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে লাশ দাফনের প্রায় ১০ দিন পর একটি স্থানে লাশের হাড়গোড় পাওয়া যায়। ওই হাড়গোড়ের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে নিখোঁজ কিশোরীর বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রেলপথ থেকে উদ্ধার লাশের আলামতও ডিএনএ টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন