আরমান কবীর : ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়ক পরিচয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন দখল করে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে আবাসনের চেষ্টা করেছেন মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। এ ঘটনায় শনিবার (৮ মার্চ) রাতে মুচলেকার মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পান তিনি।
রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন শরিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার (৮ মার্চ) রাতে বাড়ি দখলের খবর পেয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন শরিফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাসাটি দখলমুক্ত করতে সক্ষম হন।
মুচলেকায় মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বলেন, আমি আইনি অধিকার ব্যতিরেকে অন্যের ব্যক্তিগত বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জন নারী-পুরুষকে আবাসনের চেষ্টা করে অপরাধ করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার পোস্টের কারণে ক্ষেত্র বিশেষে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তার দায় আমার ওপর বর্তায়। আমি আমার নেতিবাচক ও বে-আইনি কৃতকর্মের জন্য মানবিক বিবেচনায় ক্ষমাপ্রার্থী।
এই নারী আরও বলেন, ভবিষ্যতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয় এমন ফেসবুক পোস্ট করা এবং ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পদ দখল বা ভাঙচুর করাসহ অন্য কোনো প্রকার অপরাধে লিপ্ত হব না। আমি প্রদত্ত মুচলেকা ভঙ্গ করলে প্রচলিত আইনে আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে তার বিপরীতে আমার কোনো আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন শরিফ বলেন, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে এক নারী সাবেক সংসদ সদস্যের বাসাটি অবৈধভাবে দখল করে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জন নারী-পুরুষকে আবাসনের চেষ্টা করে। পরে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। বাড়িটি কয়েক ঘন্টার মধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে সরকারের ব্যবস্থাপনায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত নারী এ ধরণের কর্মকাণ্ড করে অপরাধ করেছেন মর্মে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ করবেন না মর্মে প্রত্যয়ন দেন। মুচলেকায় তার স্বামীসহ মোট ৫ জন সাক্ষী স্বাক্ষর করেন। বিশ্ব নারী দিবস ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজান বিবেচনায় ভুল শুধরে নেওয়ার একটি সুযোগ দিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরূপ পোস্ট করলে এবং সরকারি বা বেসরকারি সম্পদ ভাঙচুর বা দখলসহ অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলে আইনগভাবে অধিকতর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে, জেলার বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘটনার বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারা মিষ্টির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি প্রদান করে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।
এদিকে, ঘটনাস্থল শহরের ছোট কালিবাড়ীর এলাকাবাসী জবরদখলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের কর্মকাণ্ড ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।