নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী পৌরসভায় প্রতারণার মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাশ, নির্মাণ বিধি লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ ও চলাচলের রাস্তা দখল করে গাইড ওয়াল নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মো. রহমত উল্যাহ আর্জু নোয়াখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিরামপুর এলাকার মৃত মো. আবদুল্লাহ মিয়ার ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য।
সাবেক ওই সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক বরাবর কাশিরামপুর গ্রামের মো. লুৎফুল করিম সাহেদ নামের এক ব্যক্তি লিখিতভাবে এমন অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী লুৎফুল করিম সাহেদ বলেন, অভিযুক্ত রহমত উল্যাহ আর্জু বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য চলাচলের ৮ ফুট বিশিষ্ট রাস্তাকে ১২ ফুট রাস্তা মর্মে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে নোয়াখালী পৌরসভার সার্ভেয়ারকে ম্যানেজ করে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ভবন নির্মাণের প্ল্যান অনুমোদন করিয়ে নেন।
নোয়াখালী পৌরসভার ভবন নির্মাণ বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত প্ল্যানটি ৩ তলা হওয়ার কথা থাকলেও প্রতারণার মাধ্যমে তা করা হয় ৫ তলা ভবনের অনুমোদন। পরবর্তীতে ওই অবৈধ প্ল্যান মতে অনুমোদিত জায়গার চার পাশে নির্দিষ্ট জায়গা খালি না রেখে বিধি লঙ্ঘন করে প্লটের সম্পূর্ণ ভূমির ওপর ভবন নির্মাণ করেন রহমত উল্যাহ আর্জু। ফলে ভবনের ছাদের কিছু অংশ রাস্তার ওপরে চলে আসে। এছাড়াও কাশিরামপুর নতুন বাড়ির ৮ ফুট বিশিষ্ট রাস্তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হলেও সম্প্রতিক সময়ে তিনি তার ভবনের পূর্ব পাশ্বের উত্তর-দক্ষিণে
লম্বালম্বি রোক সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ১ ফুট উচ্চতায় তার সীমানার পুরো অংশ নিয়ে একটি গাইড ওয়াল নির্মাণ করেন। এতে করে একদিকে চলাচলের রাস্তা সংকুচিত হয়, অপরদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, রহমত উল্যাহ আর্জুর বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি নোয়াখালী পৌরসভা আমলে নিয়ে ২০২৪ সালের ০১ ডিসেম্বর বিরোধকৃত নির্মাণাধীন সকল কাজ বন্ধ রাখার নিদের্শ দিয়ে সাবেক
ওই সেনা সদস্যেকে নোটিশ প্রদান করা হলেও সে তার বড়ভাইয়ের অসুস্থতার কথা বলে নোয়াখালী পৌরসভার নিকট একমাস সময় চেয়ে পৌরসভার নিদের্শনা অমান্য করে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এসব বিষয়ে আমি অভিযোগ করায় আমাকে প্রাণে হত্যাসহ লাশ গুমের হুমকি দেয় রহমত উল্যাহ আর্জু।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক এই সদস্য প্রচলিত আইন-কানুন, শালিস-দরবারের তোয়াক্কা না করেই প্রতারণার মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের প্লান অনুমোদন করে পেশী শক্তি ব্যবহার করে জোরপূর্বক লুৎফুল করিম সাহেদসহ একাধিক পরিবারের চলাচলের রাস্তা দখল করে গাইড ওয়াল নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ওয়াল সরিয়ে নিলেও নির্মাণ করা হয় প্রতারিত প্ল্যান অনুযায়ী পাকা ভবন।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মো. রহমত উল্যাহ আর্জু বলেন, আমিও কাউন্টারে পৌর প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। পৌর কর্তৃপক্ষ আমাকে নোটিশ পাঠালে আমার ভাইয়ের অসুস্থতার কারণে এক মাস সময় চেয়েছি। পৌরসভার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। নোয়াখালী পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. মাহবুবুউল ইসলাম জানান, এই বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। লুৎফুল করিম সাহেদ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ পেয়ে চলাচলের রাস্তায় মো. রহমত উল্যাহ আর্জুর
নির্মিত গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। মো. রহমত উল্যাহ আর্জুর বিরুদ্ধে প্ল্যান বর্হিভূত ভবন নির্মাণের কোন অভিযোগ থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।