তিন দিবসে ঝিনাইদহের চাষিদের শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা
ফিরোজ আহম্মেদ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা, ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণ উৎসব উপলক্ষে ফুল বিক্রির জন্য পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা।
সামনের তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবে এমনটি আশা করছেন ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এই তিন দিবসের আগেই মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। মূলত ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাজার ধরতেই চাষিদের সব প্রস্তুতি চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, জেলার সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, টিউলিপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন জাতের ফুল। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ফুলের উৎপাদন অন্যবারের তুলনায় বেশি হয়েছে।
তাই বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাজার সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন এ জেলার ফুল চাষিরা। এসব উৎসব পর্যন্ত ফুল ধরে রাখতে, পোকার আক্রমণ ও পচন রোধে নিচ্ছেন পরিচর্যা।
চাষিদের আশা, বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলাতে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করা হয়েছে।
কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষি টিপু সুলতান বলেন, ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ও রজনীগন্ধা, ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয়। এ জন্য এখন ফুলের পরিচর্যা করছি।ফুলের মান ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক নিয়মিত ব্যবহার করছি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে।
প্রথম দিকে দাম কম থাকলেও যত দিন যাচ্ছে ফুলের দামও ততই বাড়ছে। আশা করছি এ বছর ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারব। রেজাউল ইসলাম নামের আরেক ফুলচাষি বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি।আমার বাগানের গোলাপগুলো লংস্টিক এবং লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের। এ রঙের ফুল ভালোবাসা দিবসে অনেক বেশি কদর থাকে। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। গতবারের চেয়ে এ বছর ফুলের দাম ভালো পাব।
সদর উপজেলার পাইকপাড়া এলাকার ফুলচাষি নজরুল ইসলাম বলেন,এ বছর দুই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। আশা করছি অন্তত ৩০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব।
জেলা ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জমির উদ্দিন বলেন, সারা বছর ফুল বিক্রি কম থাকলেও মূলত বেচাকেনা হয় কয়েকটি উৎসব ঘিরে। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ফুলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে ঝিনাইদহ জেলা থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, সারা দেশের ফুলের চাহিদা মেটাচ্ছেন ঝিনাইদহের চাষিরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের নিয়মিত দেখভাল করা হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকার জন্য চাহিদার চেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয়েছে এ জেলায়। আশা করছি ফুল চাষিরা অন্যবারের চেয়ে এবার বেশি টাকার ফুল বিক্রি করবে।