শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার সোহেলিকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলো আইসিসি ◈ এক থানার ১৩ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড, জানা গেল কারণ ◈ আবারও যুক্তরাষ্ট্রে দুই বিমানের সংঘর্ষ ◈ মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া নিলে সিএনজি চালককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ◈ হাসিনাসহ শীর্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩-৪টি মামলার রায় অক্টোবরে: আসিফ নজরুল (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন আশা করছে ইউএনডিপি: স্টেফান লিলার ◈ বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত গ্রেফতার ৪৮ ◈ শাহবাগে আজও প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা (ভিডিও) ◈ আধিপত্য থেকে বৈধতার সংকটে আওয়ামী লীগ! ◈ আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার ভেতরে  শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার 

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৮:৪৬ রাত
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কুষমেক পূর্ণাঙ্গরূপে হাসপাতাল চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ

ফয়সাল চৌধুরী : ৫০০ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
 
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক বন্ধ করে মেডিকেল কলেজের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে তারা হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামকে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। 
 
আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা বলেন, হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। তবে আশ্বাস ছাড়া বাস্তবায়নের মুখ দেখিনি। দ্রুত হাসপাতাল চালু করা না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি না মানার কারণে আমরা হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেছি এবং সড়ক অবরোধ করেছি।
 
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আশ্বাস পেয়েছি। ২০ দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করা হবে। এতে আমরা দুপুর দেড়টার দিকে সড়ক থেকে সরে আসি। আমাদের দাবি না মানা হলে পরবর্তীতে আবারও আমরা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করব। 
 
সরকারের কাছে দ্রুত এই মেডিকেল কলেজ পূর্ণরূপে চালুর দাবি জানিয়ে
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বারবার সময় ও অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৩ বছরেও পূর্ণরূপে চালু করা যায়নি হাসপাতালটি। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য হাসপাতাল খুবই জরুরি। জেনারেল হাসপাতালে অপ্রতুল যন্ত্রাংশ, ব্যাপক রোগীর ভিড়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রভৃতি সমস্যা হয়। সরকারের কাছে দ্রুত এই মেডিকেল কলেজ পূর্ণরূপে চালুর দাবি জানান তারা।
 
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি তুলে নেয়ার কথা বললেও হাসপাতাল কার্যক্রম চালুর নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় থাকেন।
 
পরে সেনা সদস্যদের মধ্যস্থতায় আগামী ২০দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালুর আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা। 
 
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রায় ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কেন চালু হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে প্রশাসনের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানানো হয়। আগামী ২০দিনের মধ্যে চালু না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিবেন বলেও জানান তারা।
 
হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবসম্মত না হলেও মেনে নিতে হয়েছে। আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করব। ২০ দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ দুটি অন্তত চালু করা হবে।
 
এদিকে গণপূর্ত কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। 
 
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশকের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প হলো কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন হাসপাতাল। এটি কুষ্টিয়া রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন প্রায় ২০ একর জমির ওপর নির্মিত। নির্মাণাধীন হাসপাতালের সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা থাকছে। 
 
 এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে। কলেজ ও হাসপাতাল মিলে থাকছে ২১টি বড় লিফট। ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিই্উ, অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলোজি, গাইনী, চক্ষু ও নাক,কান-গলাসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আমদানী এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে মেশিনসহ বিদেশ থেকে আমদানি চাহিদার ৬০ ভাগ কোটি কোটি টাকার যন্ত্র-মেডিকেল সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। 
 
 জেলাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বহুল প্রত্যাশিত এই প্রকল্প দুটি অবশেষে দৃশ্যমান হয়েছে। এর ফলে নানা রকম সুফল ভোগ করবে এই অঞ্চলের মানুষসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ। শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন নয় মেডিকেল কলেজটি পূরণ করবে এই এলাকার শত শত শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন। 
 
অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের সঙ্গেই নির্মাণাধীন ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির কারণে এই এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় জেলা বাসি সহ আশপাশের জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ মানুষ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও নানান দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
 
 
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়