শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনার বিচারের মঞ্চ হবে ফাঁসির মঞ্চ: সারজিস আলম (ভিডিও) ◈ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মেহের আফরোজ শাওন গ্রেপ্তার ◈ অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ◈ ফের রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ◈ ভারত এখনো সাড়া দেয়নি হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধে, রাজ্যসভাকে জানালেন দেশটির প্রতিমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ ভোটার কখনো ভোট দিতে পারেনি ◈ আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা  ◈ পল্লবীতে সেনাবাহিনী পরিচয়ে ফ্ল্যাট দখল করার চেষ্টা, গ্রেফতার ১৩ ◈ শিকল দিয়ে হাত পা বেঁধে অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র (ভিডিও) ◈ শেখ হাসিনার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে অনুসন্ধান করবে দুদক

প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৬:২২ বিকাল
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মেঘনার অরক্ষিত জেলেরা, নির্ধারিত স্লিপ না পেলে চলে নির্যাতনের স্টীমরোলার

ফরহাদ হোসেন, ভোলা প্রতিনিধি : উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও কালাবাদর নদীতে জেলেরা ফের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নদীর আধিপত্য নিয়ে সংঘাত, সংঘর্ষ, খুনোখুনি, হিংসা, হানাহানি আর রক্তপাতের খেলা দানা বেঁধে উঠেছে। এখানকার নৌপথে পুরনো মোড়কে নতুন সন্ত্রাসী কার্যক্রম সাধারণ জেলেদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।

মেঘনা ও তেতুলিয়ার ১৯০ কিলোমিটার মৎস্য অভয়ারণ্যে নদীতে জলদস্যুদের যন্ত্রণায় সাধারণ জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরতে ভয় পাচ্ছেন। জেলেদের ভাষ্যমতে, উত্তাল নদীর তর্জন-গর্জনকে ভয় না পেলেও জলদস্যুদের ভয়ংকর হিংস্রতায় তারা নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

জেলেদের অভিযোগ, প্রশাসনিকভাবে নিরাপত্তার কথা বলা হলেও জেলেদের নিরাপত্তার জন্য আজো কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে জলদস্যুরা যখন-তখন জেলেদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

গত কয়েকদিন আগে জেলা সদরের পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের অদূরে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার অপরাধে মো: হোসেন (৩০) নামের জেলেকে গুলি করে হত্যা করে জলদস্যুরা। এসময় দস্যুদলের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন আরো তিন জেলে আব্বাস (৩২), কাঞ্চন (৩৪) এবং সোহেল (২৯)। ঐ রাতেই তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, ভোলার মেঘনায় জেলেরা মাছ শিকার করছিলেন। এসময় একদল জলদস্যু জেলেদের ট্রলারে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। জেলেরা প্রতিহত করতে চাইলে তাদের উপর গুলি চালায় দস্যুরা। এতে জেলে হাসান নিহত হন এবং আহত হন আরও ৩ জেলে। আহত ও নিহত জেলেদের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার বাঘার হাওলা গ্রামে বলে জানা গেছে।

এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের ৩টি দল রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ভোলা নৌপুলিশের ইনচার্জ মোঃ শাহিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

হঠাৎ করেই মেঘনায় জলদস্যুদের উপদ্রব বাড়ায় সাধারণ জেলেদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলেরা বলছেন, নদীকে শান্ত ও নিরাপদ রাখতে নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ড ও নৌবাহিনী মোতায়েন থাকলেও নৌ-দস্যুতা দমনে কার্যত দৃশ্যমান কোন ফলাফল দেখছেনা কেউ।

ইলিশা এলাকার মেঘনা পাড়ের মৎস্যজীবী আবুল কালাম, দাইমিদ্দিন ও সাফিজল হকের সাথে। তারা বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের জমানায় মেঘনা নদীতে যারা আধিপত্য ও নৈরাজ্য চালাতো জুলাই বিপ্লবের পর তারাই জার্সি বদল করে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এ সমস্ত দস্যুরা এতই ভয়ঙ্কর যে, তাদের ভয়ে সাধারণ জেলেরা মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হয়। কেউ তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার উপর চালানো হয় নিষ্ঠুর নিপীড়ন। আর এমন প্রতিবাদ করায় দস্যুদের সর্বশেষ বলির শিকার হলেন, জেলে হাসান।

ইলিশার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন ফরাজী অভিযোগ করেন, ভোলায় মেঘনার বিশাল জলরাশিতে জেলেদের মাছ ধরতে নামতে হলে প্রভাবশালীদের নির্ধারিত স্লিপ ক্রয় করে নদীতে যেতে হয়। ওইসব স্লিপ চেক করতে নদীতে দস্যুদলের ক্যাডার বাহিনী স্পিডবোট নিয়ে তল্লাশীতে নিয়োজিত থাকে। কোনো জেলের হাতে ওই স্লিপ পাওয়া না গেলে তাদের উপর নির্যাতনের ষ্টীমরোলার চালানো হয়। মেঘনার মাঝ দরিয়ায় জেলেদের ওপর এমন অসংখ্য নির্যাতনের কাহিনী এখন নিত্যকার ঘটনা হয়ে উঠেছে।
জেলেরা জানান, গত ১৫ বছরে ভোলার মেঘনায় জলদস্যুদের আক্রমনে শতাধিক জেলের জীবনহানীর ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের কোনো দপ্তরের তালিকায় তাদের নাম নেই। তাদের পরিবারের খবর রাখেনি কেউ। ওই পরিবারগুলো পায়নি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। হয়তো নিহত জেলে হাসানের পরিবারের কপালটাও সেভাবেই পুড়বে।

তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশ দ্বিতীয় বার স্বাধীন হলেও উপকূল তথা ভোলার মেঘনা নদীতে নিরীহ জেলেদের উপর প্রভাবশালীদের বৈষম্যের কোনো কূল-কিনারা হয়নি। এব্যাপারে ভোলার পুলিশ সুপার মোঃ শরীফুল হক বলেন, মেঘনায় দস্যুতা দমনে জেলা পুলিশ ও নৌপুলিশ একযোগে কাজ করছে। জেলে হত্যার বিষয়টির সাথে কোন গ্রুপ জড়িত সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভোলার পার্শ্ববর্তী জেলার দূর্বৃত্তরাও এখানকার নদনদীতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। 
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়