ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর পবায় ১২টি হাটের ইজারার ওপেন টেন্ডারের আহব্বান করে উপজেলা প্রশাসন। এতে গতকাল রোববার অব্দি সিডিউল ক্রয় করেন ৭৬ জন অংশগ্রহণকারী। কিন্তু টেন্ডার বাক্স দখলকে কেন্দ্র করে মাত্র আধাঘন্টার তান্ডবে পন্ড হয়ে যায় ইজারা কার্যক্রম। উপজেলা প্রশাসনের কাছে থাকা টেন্ডার বাক্স থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় অধিকাংশ টেন্ডারপত্র।
এ সময় দুষ্কৃতিকারী দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয় তিনজন। এর মধ্যে এক যুবক ছুড়িকাঘাতে তলপেটে আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৪নং ওয়ার্ডে ভর্তি হন শাকিলুর রহমান রন। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের কর্মী। এছাড়াও রিপন ও আকাশ নামের আরও দুই যুবক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষের বাইরে টেন্ডার বাক্সটি পড়ে আছে। ভেঙ্গে ফেলা বের করে নেওয়া হয়েছে দরপত্রগুলো। তার মধ্যে পড়ে আছে ইটের কয়েকটি টুকরো। পরিষদের ভেতরেই কয়েকটি স্থানে দেখা মেলে বিষ্ফোরিত কয়েকটি ককটেলের অবশিষ্ঠাংশ। তবে দেখা যায়নি গুলির খোসা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলি করার পরপরই সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গায়েব করে ফেলেন দুর্বৃত্তরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টা ৩৫ মিনিটের দিকে হাট ইজারার টেন্ডার বাক্স দখলকে কেন্দ্র করে পবা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে দোতলা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষ চলে প্রায় ১টা পর্যন্ত। আধাঘন্টার এ সংঘর্ষে ৬টি ককটেল ও চার রাউন্ড গুলি ছোড়েন দুর্বৃত্তরা। টেন্ডার বাক্স ফাঁকা করে নিয়ে যান দরপত্র। মূলতঃ এককভাবে হাট ইজারার দখল নিতেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ।
তিনি বলেন, ঘটনা যখন ঘটে, ওই সময় আমি বাইরে একটি প্রোগ্রামে ছিল। তবে ঘটনা জানার পরপরই আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জন্য পুলিশ-প্রশাসনে ফোন করলে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনী আসেন। এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এলাকায় আমি নতুন এসেছি। কাউকে চিনতে পারবো না। তবে এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে বিশৃংখলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারি কাজে বাধাদানের ব্যাপারে একটি এজহার এবং টেন্ডারের কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় একটি জিডি করা হয়েছে। প্রশাসনের লোকেরা এসে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। তারাই এর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ১২টি হাটের ইজারা নিয়ে নয়। মূল ঘটনা ঘটেছে খড়খড়ি বাইপাস হাটের ইজারা নিয়ে। সেখানে ৩৩জন অংশগ্রহণকারী হাট ইজারায় অংশ নিয়েছিলেন। খড়খড়ি বাইপাস হাটটি ৬ মাসের জন্য ইজারায় নিয়ে চালাচ্ছেন শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি। তার ইজারা এখনো চলমান। তিনি ৮৮ লাখ টাকায় ডাকে হাটটি ইজারা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সম্প্রতি খড়খড়ি বাইপাস হাটটি ৬৬ লাখ টাকা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ওপেন টেন্ডারের আহব্বান করে উপজেলা প্রশাসন। এতে ৩৩ জন অংশ নেন। যার ওপেনিং ছিল সোমবার বিকেলে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টেন্ডার বাক্স খোলার আগেই উপজেলা প্রশাসনের কাছে থেকে তা ছিনিয়ে নেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্য শাকিল, পবা উপজেলার নওহাটা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো. মিলন ও জেলা যুবদলের সদস্য, ইফতেখার হোসেন ডনি। তাদের নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে পলাশ, আশিক, রোকন, মুন্না, ডনি সহ প্রায় অর্ধশত সন্ত্রাসীরা মিলে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টেন্ডার বাক্স ভাঙচুর, রিভালভারের ফাঁকা গুলি ছোড়েন ও ঘটনাস্থলে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে। অপরদিকে, শাহজাহানের পক্ষে সংঘর্ষে জড়ান নাবিল গ্রুপের লালটু, রমজান, রেন্টু, টিংকু, রেজাউল, আলামিন, রাসেল, শাওন সহ ৩০-৩৫ জন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় রাজশাহী মহানগর যুবদল কর্মী শাকিলুর রহমান রনি তলপেটে ছুরিকাঘাত প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে একাধিকবার শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জকে কল করেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। পরে এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান ও নগর মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিনকে একাধিকবার তাদের মুঠোফোনে কল করা হয়। ফোন না ধরায় তাদের মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা প্রদান করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :