কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মায়ের সামনে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ইমরান হোসেন (২১) নামে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে একদল সন্ত্রাসী। নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই যুবক আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ইমরান একই গ্রামের মো. শাহ আলমের ছেলে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বাদী হয়ে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী শহিদুর রেজা (রতন) মিয়াজীকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ইমরান একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। শুক্রবার রাতে স্থানীয় তারাশাইল বাজারের বিকাশ দোকান থেকে ইমরান ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে শহিদুর রেজা (রতন) মিয়াজীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় ইমরানের চিৎকারে তার মা আফরোজা বেগম ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে।
পরে ইমরানকে দৌলতপুর মসজিদের সামনে এনে একটি সোলার ল্যাম্পের খুঁটির সাথে বেঁধে মায়ের সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা চতুর্দিকে অস্ত্র হাতে মহড়া দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে সাহস করেনি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত এই নির্যাতন চলতে থাকে। নির্যাতনের একপর্যায়ে ইমরান অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা তাকে রেখে পালিয়ে যায়।
পরিবারের লোকজন ইমরানকে গুরুতর আহত অবস্থায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নির্যাতনের একটি ভিডিওচিত্র শনিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে মুমূর্ষু অবস্থায় ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার পুরো শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
ইমরানের মা আফরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ছেলে প্রায় সময় প্রতিবাদ করতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার ছেলেকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার পর ইমরান তারাশাইল বাজারের একটি বিকাশ দোকান থেকে টাকা উঠিয়ে ফেরার পথে তাকে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে। পরে মৃত ভেবে তারা আমার ছেলেকে ফেলে রেখে চলে যায়। আমি প্রশাসনের প্রতি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইমরান নামে এক যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র আমার নজরে এসেছে। অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। উৎস: দেশ রুপান্তর।
আপনার মতামত লিখুন :