মোঃ সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুর রহমান (৩৪) হাসপাতালে মারা গেছেন। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আটকের পর মারধর এবং সময়মতো চিকিৎসা না দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজন ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তবে অভিযাগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
নিহত আবদুর রহমান সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের ছায়েদুল হকের ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আমিশাপাড়া খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের নেতা ছিলেন।
আবদুর রহমানের জেঠাত ভাই মো. হানিফ বলেন, আমার চাচাতো ভাই আবদুর রহমান ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রদল করা অবস্থায় সে সোনাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও আমিশাপাড়া খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে আবদুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমনে এলাকায় থাকতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকায় আসে আবদুর রহমান।
তিনি বলেন, আবদুর রহমান রাজনীতি করলেও কোন ধরনের অন্যায় অথবা চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। অথচ আমার ভাই আবদুর রহমান ও ভাতিজা হাবিবুর রহমানকে (২৫) রোববার দিবাগত রাত চারটার দিকে বাড়ি থেকে আটক করেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। আটকের পর পরিবারের সদস্যদের সামনে তাদের মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় তাদের কাছ থেকে কার্তুজ ও কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সকালে দুজনকে সোনাইমুড়ী থানায় সোপর্দ করা হয়।
হানিফের দাবি, পুলিশে সোপর্দ করার পর থানায় গিয়ে দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দুজনকে বিকেল পাঁচটায় আদালতে পাঠানো হয়। আদালত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বললে পুলিশ সাড়ে পাঁচটার দিকে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর আবদুর রহমান মারা যান।
পুলিশ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে সারা দিন থানায় রাখায় আবদুর রহমান মারা গেছেন অভিযোগ করে হানিফ আরও বলেন, আমরা হলফ করে বলতে পারি আমার ভাই কখনো কোন ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।
নিহত আবদুর রহমানের প্রতিবেশী বিএনপি কর্মী রাসেল মাহমুদসহ স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবদুর রহমান ও হাবিবুর রহমানকে আটকের পর শারীরিক টর্চার করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) রাজিব আহমেদ বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ আবদুর রহমান ও
হাবিবুর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে আবদুর রহমান মারা যান। তাদের দুজনেরই শরীরে জখম ছিল তবে কাটাছেঁড়া ছিল না।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম মুঠোফোনে বলেন, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে যৌথবাহিনী পুলিশের কাছে আবদুর রহমান ও হাবিবুর রহমানকে হস্তান্তর করে। তখন তাদের অবস্থা ভালো ছিল না। এ কারণে তখনই তাদের বজরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তার বলছে অসুবিধা নাই, আপনারা নিয়ে যান। অন্য কোন হাসপাতালে স্থানান্তরও করে নাই। তাই তাদের সেখান থেকে সাড়ে ১০টার দিকে থানায় আনা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ৩টা ১০-২০ মিনিটে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে বলা হয়েছে, তারা যেহেতু অসুস্থ্য আপনারা আগে চিকিৎসা করান। তারপর আমরা তাদের মেডিকেলে নিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা আছে, পুলিশ তাদেরকে কোন ধরনের মারধর করেনি। তাদের থানায় আনার পর তাদের আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মী সবাই থানায় ছিলেন। ওসি আরও বলেন, আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মারামারির ঘটনায় দায়ের হওয়া আগের তিনটি মামলা রয়েছে। হাবিবুরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাদের কাছ থেকে রাইফেলের দুটি গুলি ও তিনটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে। নোয়াখালী সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রিফাত আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ভোরে দুই আসামিকে দুটি গুলি ও তিনটি ছুরিসহ আটক করে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সোনাইমুড়ী থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে পুলিশ মামলা রুজু করে আদালতে উপস্থাপন করে। সন্ধ্যায় হাসপাতালে আবদুর রহমান মারা যান।
তিনি গণমাধ্যমে দাবি করেন, কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের প্রশ্নই আসে না। ধরার সময় ধস্তাধস্তিতে সামান্য আহত হতে পারে। তবে সারাদিন তিনি থানা হেফাজতে ছিলেন। তেমন কিছু হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হতো। বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হলে আবদুর রহমান অসুস্থ বোধ করেন। পরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘যৌথবাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন হিসেবে সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুর রহমানসহ চারজনকে আটক করা হয় বলে শুনেছি। তাদের মধ্য থেকে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয় আর দুজনকে আটক ও মারধর করা হয়। সময়মতো আদালতে না পাঠিয়ে থানায় আটকে রাখায় চিকিৎসার অভাবে আবদুর রহমান মারা গেছেন। আমরা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
আপনার মতামত লিখুন :