সিরাজগঞ্জের তাড়াশ চলনবিল অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন সরিষা ফুলের মহাসমারহ। প্রতিদিনই এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অসংখ্য প্রকৃতি প্রেমী নারী পুরুষ ও শিশুরা সরিষার মাঠে ছবি তুলছেন নানা সাজে, নানা আঙ্গিকে। অনেকে সরিষার মাঠে দাঁড়িয়ে ভিডিও করে সেটি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউবা ভালবাসার মানুষটির খোঁপায় গুজে দিচ্ছেন হলুদ সরিষার ফুল। এতে সমস্যায় পড়েছেন এসব সরিষা জমির মালিকেরা। সৌখিন লোকজনের দল বেধে সরিষার জমিতে যাতায়াত, দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলা এসব কারণে সরিষা গাছ গুলো পদদলিত হয়ে নষ্ট হচ্ছে। আবার ফুল ছিড়ে খোপায় গোজা বা হতে নিয়ে ঘোড়া এতেও ক্ষতি হচ্ছে।
সরিষা জমির মালিকেরা বাধ্য হয়েই বাধা দিচ্ছেন এসব কাজ না করতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তাই অনেক জমির মালিক ফসল বাঁচাতে জমির মাঝে প্রবেশ না করতে বা ছবি না তোলার জন্য সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। কেউবা নিরুপায় হয়ে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে জমির সরিষা পাহারা দিচ্ছেন। উপজেলার মাগুরা বিনোদ, কুন্দইল, মাকোড়শন, কামারশোন, দিঘী সগুনা অঞ্চলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপজেলার দিঘী সগুনা গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুল সালাম জানান, তার সরিষার জমিতে দর্শনার্থীরা ছবি তোলার জন্য যে হারে নামছে তাতে প্রচুর সরিষার গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে সরিষার জমিতে দল বেঁধে যাতায়াত করলে এক মুঠো সরিষাও ঘরে উঠবে বলে মনে হয় না।
মাকোরশোন গ্রামের সরিষা চাষি শফিকুল জানান, দর্শনার্থীদের জালায় বিরক্ত হয়ে জমিতে ছবি না তোলার ব্যাপারে সাইন বোর্ডও ঝুঁলিয়ে দিয়েছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা ফুলের মধ্যে ছবি তোলা সৌখিন সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। জমিতে প্রবেশ না করে বাইরে থেকে ছবি তোলার কথা বললেও তা মানছেন না কৌতুহলী দর্শনার্থীরা। বাধ্য হয়ে লাঠি নিয়ে সরিষার জমি পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন।
বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, সরিষার জমির পাশ থেকে ইচ্ছে মত ছবি তোলা যায় না। তাই তাদেরকে সরিষার জমির মাঝে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। এতে কিছু সরিষা অবশ্যই নষ্ট হয় বলে তারা স্বীকারও করেন। প্রতি বছরই তারা চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা মাঠে ছবি তুলতে আসেন। কিন্তু দিনের বেলা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে সরিষার জমি পাহারা দেবার দৃশ্য এবারই প্রথম তাদের চোখে পড়চ্ছে!
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আসলে এ বছর চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা ফুল দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে জমিতে গিয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য লাইভ দেখাচ্ছেন। এতে সরিষার কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তবে তিনি দর্শনার্থীদের কৃষকদের বিষয়টিকে মাথায় রেখে সচেতনভাবে সরিষা মাঠের আইলে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আহবান জানান। এছাড়া সরিষা ক্ষেতের পাশে মানুষের ভিড় দেখে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এতে সরিষার পরাগায়নে বাঁধা পরছে এতে ফলন ও মধুর পরিমান কমে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :