কল্যান বড়ুয়া, বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরীর নামে ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ নিয়ে সোমবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত কার্যালয়ের উপসহকারি পরিচালক মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মতে, ২৭টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি । মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সম্প্রতি পৃথক দুটি মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যেখানে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে উভয় মামলায় আসামি করা হয়েছে। শিগগিরই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে অর্জিত ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮১ টাকা ২১টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে উৎস গোপন করার চেষ্টায় সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এ ছাড়া নিজ নামে ৯৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তার স্বামীর অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার অপপ্রয়াসে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। যার অংশ হিসেবে আয়কর নথিতে প্রদর্শিত করে তার স্বামীর অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৯ টাকা ছয়টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করে অর্থের উৎস গোপন করার চেষ্টায় অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর বা রূপান্তর করে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন। বৈধ উৎস না থাকা সত্ত্বেও তার স্বামীর অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ নিজ নামে ২ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ১০ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। যে কারণে শাহীন আক্তার চৌধুরীকে প্রধান আসামি ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সহযোগী আসামি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিগত দু,বারের সংসদ সদস্য এবং ২০২৪এর জাতীয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন বাতিলকৃত মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে দুদকের মামলা ছাড়া স্থানীয় ও রাজনৈতিক ভাবে ৬টি মামলা করা হয় । এদিকে বিগত ১৫ অক্টোবর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন থেকে সিদ্ধান্তেরর পর দুদক উপপরিচালক মুর্তুজা-আল-মাহমুদের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা।
উল্লেখ্য সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও ৫ চেয়ারম্যান, এমপি কন্যা সহ দলীয় শতাধিক নেকাকর্মীর বিরুদ্ধে ৪ জুলাই শফকত চাটগামী ও কালীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল হক বাদী হয়ে অপর দুটি মামলা করেছিলেন। ২৭ আগস্ট বাঁশখালী সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদের আদালতে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান চৌধুরী ও সরল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জাফর আহমদ আহমদ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বাঁশখালী সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আবদুল হামিদের আদালতে মামলাটি করেন সরল ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা গ্রামের আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দু,বারের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন ৭ অক্টোবর মো. বেলাল উদ্দিন। অপর একটি মামলা ঢাকার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী মোহাম্মদপুর) আদালত ২এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ করা মামলা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে ২৭নং আসামি করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :