জিয়াবুল হক,টেকনাফ (কক্সবাজার) : পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের মিলিটারির ওয়েস্টার্ন কমান্ড দখল করে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে আরাকান আর্মি। সেই সঙ্গে ডেপুটি রিজিওনাল কমান্ডার জেনারেল থাউং তুন এবং জেনারেল কেয়ো কেয়োকে আটক করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। গত ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মির মুখপাত্র এসব তথ্য জানিয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আরাকান আর্মির বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুরো ওয়েস্টার্ন মিলিটারির সদর দপ্তর দখল করে নেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ডেপুটি রিজিওনাল কমান্ডার জেনারেল থাউং তুন এবং জেনারেল কেয়ো কেয়োকে। সেই সঙ্গে মিলিটারি কাউন্সিলের যে সদস্যরা পালিয়ে গেছে, তাদের তাড়া করে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরো ওয়েস্টার্ন রিজিয়ন মিলিটারি হেডকোয়ার্টার দখল করে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এদিকে রাখাইন রাজ্যে এই মিলিটারির সদর দপ্তরটি একেবারেই বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের কাছা কাছি অবস্থিত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাগাতার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবার রাতেও ঘণ্টাখানেকের মতো সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফনদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
সীমান্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাঝখানে লাগাতার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তবে গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবারের আগে টানা ৯ দিন টেকনাফের কোন সীমান্ত থেকে কোনো ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসেনি। বুধবার রাতে ঘণ্টাখানেক ধরে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তের এই পরিস্থিতিতে নতুন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে তাদের রাত কাটছে বলে দাবি করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ এহসান উদ্দিন। তিনি প্রশাসনের তরফ থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে বাংলাদেশ উপকূলে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থলপথে নজরদারি চলছে। নজরদারি চালানো হচ্ছে নৌপথেও। এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, টেকনাফ উপজেলার নাফনদীর বিভিন্ন সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিজিবি সতর্ক রয়েছে। কিছুতেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হতে দেওয়া যাবেনা। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মিয়ানমারে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে আবারও বড় ধরনের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাড়তে পারে সমস্যা। জটিল হতে পারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়। আর সেই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আপনার মতামত লিখুন :