জাহাঙ্গীর লিটন , লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : বন্যা পরিস্থিতিতে এবার লক্ষ্মীপুরে সুপারির ফলন হয়েছে কম, তবে দাম অন্যবারের তুলনায় বেশী হওয়ায় বাগানীরা বেশ খুশি। সুস্বাদু ও আকারে বড় হওয়ায় সারাদেশে কদর রয়েছে লক্ষ্মীপুরের এসব সুপারির। অর্থকরী লাভজনক এ ফসল উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জেলা জুড়ে। প্রতি বছর সুপারির আবাদ বাড়ছে যেমনি তেমনি বাগানীদেরও উন্নত জাত নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে বেশ।লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার, রসুলগঞ্জ, ও উত্তর তেমুহনী সুপারির বাজার হিসেবে খ্যাত। এসব বাজারে প্রতি হাটবারে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সুপারি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতারা। কৃষি বিভাগ বলছেন, চলতি বছর সুপারির উৎপাদন ৭শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে সার প্রয়োগ, পরিচর্চা আর উন্নত চারা লাগানোর পরামর্শ তাদের।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এমনি সারিবদ্ধ সুপারি গাছে দৃষ্টি কাড়ে সবার। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি উৎপাদনে বেশ উপযোগী। উপকূলীয় এ জেলার ৫টি উপজেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতেই সারিবদ্ধ রয়েছে সুপারি বাগান। গাছে গাছে সুপারির ফলনে লাল সবুজে অবস্থা। বর্তমানে সুপারির শেষ সময়ে গাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ, বিক্রি ও সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অর্থকরী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে গত কয়েক বছর থেকে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার মে: টন সুপারি উৎপাদন। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ৭শ কোটি টাকারও বেশী বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
এদিকে সুপারি উৎপাদনে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই এ অঞ্চলের মানুষ নতুন নতুন সুপারি বাগান তৈরিতে ঝুঁকছেন। চারা রোপনের ৫-৬ বছরে ফলন আসে। সামন্য পরিচর্চায় বছরের পর বছর ফলন পেতে শুরু করেন বাগানীরা।
স্থানীয়রা জানায়, অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার সুপারির হাটগুলো জমজমাট থাকে। চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বেপারিরা সুপারি কিনে বস্তা ভরছেন। চাষীরাও দরকষাকষি করে সুপারি বিক্রি করছেন। বাজারে বিক্রি করে আবার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চলে বলে জানান অনেকে। এতে করে সুপারিতে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের। সুপারির মৌসুমে কেউ সুপারি বিজিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে পরে দাম বেশী হলে বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ পণ হিসেবে অথবা কাহন (১৬ পণ) হিসেবে বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি পণ সুপারী বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত।
এ বছর বন্যায় সুপারির আকার কিছুটা ছোট এবং ফলন হয়েছে কম। তবে গেলো বছরের চেয়ে দাম বেশী পাওয়ায় স্থানীয় বাগানীরা কিছুটা স্বস্থি প্রকাশ করেন।
শ্রমিকরা জানায়, সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ থেকে সুপারী সংগ্রহ করা ও প্রক্রিয়াজাত সহ নানা কাজে ব্যস্ত তারা। ত প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় হয় বলে জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সোহেল মো. শামছুদ্দিন ফিরোজ জানান, বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবার সুপারি উৎপাদন কম হয়েছে, তবে দাম বেশী হওয়ায় চাষীরা খুশি। চলতি বছর ৩৬ হাজার মেট্রিক টন সুপারির উৎপাদন হয়েছে, যার বাজার মুল্য ৭শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে বাগানীরা তাদের বাগানে সার প্রয়োগ, পরিচর্চা আর উন্নত চারা লাগানোর পরামর্শ দেন এ কর্মমকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :