সৈয়দ আমিরুজ্জামান, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়াপুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় ও নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৪) উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে উৎসবটি করা হয়।
যদিও চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসায় মন্দা ও আর্থিক সংকট থাকায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়েছিলেন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং (করডর) ও সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী। পরবর্তীতে এ খবরটি আরপি নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আগ্রহে ও প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এবং খাসি নেতৃবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়।
মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে দেখা যায়, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষ বিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে নানান রঙের পোশাক পরে খাসিয়ারা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ছিল নাচ-গান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। মাঠের একপাশে খাসিয়াদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। সুপারি গাছের পাতা দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়োজন কিছুটা কম ছিল। কারণ একদম শেষ সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ জানান, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ২৩ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। খাসিয়ারা তাদের পোশাক ও সাজসজ্জায় নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। ‘সেং কুটস্নেম’ উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পুরো মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।
উৎসবে আসা জেসিয়া সুঙ বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষবিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। এটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসঙ্গে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি।’
এ বিষয়ে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘সেং কুটস্নেম’ আয়োজন করি।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে এসে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সর্বজনীন উৎসব।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় ও নতুন বর্ষবরণ ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নেয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান অর্থ সহায়তার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “খাসিয়াসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ ও চর্চাকে অব্যাহত রাখতে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও তাদের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।"
তিনি আরও বলেন, "খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।"
আপনার মতামত লিখুন :