শিরোনাম
◈ পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা, বেশির ভাগই ভারতে অবস্থান করছেন ◈ আওয়ামী লীগ এখনই নিষিদ্ধ নয়, তবে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে : উপদেষ্টা নাহিদ ◈ ক্ষমতার ভারসাম্য, একজন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় : বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে ১০ বছর আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, জানালেন সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার ◈ ৫৩ বছর দেখেছি, আমরা আরও দু-এক বছর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই:  নুরুল হক (ভিডিও) ◈ নবীনগরে বিপনী মার্কেটে আগুন, পুড়ে ছাই ১২ দোকান ◈ ‘ওরেশনিক’ রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক ◈ মাগুরায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:২৬ দুপুর
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাঁশখালীর শুঁটকি পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা

কল্যাণ বড়ুয়া,  বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতি‌নি‌ধি : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। শুঁটকি পল্লীগুলোতে চলছে ভরা মৌসুম। জলদকরখাল ঘেঁষে ও সমতল জায়গায় ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল শুঁটকির মাঁচা। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও ব্যস্ত সময় পার করছে। শুঁটকি তৈরির কাজে উপজেলার জেলে, শ্রমিক, ব্যবসায়ী মিলে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টাকার শুঁটকি যাচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের চাকতাই শুঁটকির আড়ত সহ বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও বাঁশখালীর শুঁটকির কদর এ শুঁটকির সুনাম র‌য়ে‌ছে । সাড়ে তিন মাসে বাঁশখালী থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে বলে জানান সংশ্লীষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় শুঁটকির মহাল (মাঁচা) হলো সরলের কাহারঘোনা জালীয়াখালী নতুন বাজার সংলগ্ন ও শেখেরখীলের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা। এখানে সবচেয়ে বেশী শুঁটকি শুকা‌নো হ‌চ্ছে। এ ছাড়াও উপজেলার ছনুয়া, গন্ডামারার, পুঁইছড়ি, নাপোড়া, শেখেরখীল, শীলকূপের মনকিচর, বাহারছড়া ও খানখানাবাদের সাগর উপকূল এবং জলকদরের চরগুলোতে অর্ধশত শুঁটকি মহালে সহস্রাধিক জেলে শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। জেলেপাড়ায় ঘরোয়াভাবে নিজেদের চাহিদা মিটানোর জন্যও সমুদ্রের মাছ শুঁকাতে দেখা গেছে। বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলের জেলেরা প্রাকৃতিকভাবে তপ্ত রৌদ্রের তাপে মাছগুলো শুকান বলেই বাঁশখালীর শুঁটকি খুবই সুস্বাদু এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, 'সাধারণত শুঁটকিপল্লীগুলোতে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের কাজ। এ উপজেলার প্রায় এলাকায় আগস্টের শুরু থেকে শুঁটকি পল্লীতে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। এতে ক‌য়েক সহস্রাধিক জেলে, শ্রমিকরা দিন-রাত কাজ করে শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ দৈনিক আর কেউ মাসিক মজুরিতে শ্রম দিচ্ছেন।'

উপজেলার শুঁটকি চাষীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, 'মৌসুম শুরুর পর থেকে আমরা উপজেলার শেখেরখীল, বাংলাবাজার, জালিয়াখালী ঘাট থেকে পাইকারী দরে সমুদ্রের কাঁচা মাছ মাছ ক্রয় করে নিয়ে আসি।শুঁটকিপল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকরা সেগুলো পরিষ্কার করেন। এরপর মাছগুলো পরিস্কার পানিতে ধুয়ে মাচায় শুঁকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুঁকালে শক্ত হয়। প্রায় ২০-২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, লইট্টা, ফাইস্যা, পোহা, তেলাহাঙ্গর, পাতামাছ অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছও এখানের মাচায় শুকানো হয়। এ অঞ্চলের শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। প্রস্তুত করার সময় কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য, কীটনাশক বা আলাদা করে লবণ দেয়া হয় না বলে এ এলাকার শুঁটকির চাহিদা একটু বেশি থাকে।'

সরলের কাহারঘোনা জালিয়াখালী নতুন বাজার সংলগ্ন শুঁটকি পল্লীর আলা উদ্দিন নামে শ্রমিক বলেন, 'দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে আমি শুঁটকির শুকা‌নোর কাজ করে আসছি। আমার এখানে ৩০ থেকে ৩৫ জন শ্রমিক মাসিক ও দৈনিক মজুরিতে কাজ করে। আমার পল্লীতে মাসিক দুইজন শ্রমিক আছে। এদের মাসিক মজুরি ২০ হাজার টাকা করে। দৈনিক মজুরিতে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে পুরুষের দৈনিক বেতন ৭৫০-৮০০ টাকা, নারীর দৈনিক বেতন ৫০০ টাকা। এ পর্যন্ত সাড়ে তিনমাসে শ্রমিকের মজুরী বাবদ ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এ সাড়ে তিনমাসে বিভিন্ন চালানে প্রায় এক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেছি । সব খরচ বাদ দিয়ে এতে আমার প্রায় তিন লক্ষ টাকা নীট লাভ থাকবে। গেল কোরবানের একমাস পরে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ শুরু করি। সাগরে ৬৫ দিন মাছ আহরণ বন্ধের ঘোষনা আসার আগ পর্যন্ত আমাদের শুঁটকি উৎপাদন কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমরা এখানে পাঁচজনের আলাদা শুঁটকি আছে। এ বছর আরো একজন বাড়ছে।'

শুঁটকি চাষীরা বলেন, ' আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করতে চাই। আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়তো; এতে শ্রমিক এবং জেলেদেরও কষ্ট কম হতো, সবাই লাভবান হতো। সরকারীভাবে সহজ কিস্তিতে ঋণ পেলে মাছ চাষের পরিধি আরো বাড়ানো যেতো।' উপজেলার একাধিক জেলে ও ব্যবসায়ী বলেন, 'প্রধান সড়কে যেতে আমাদের অভ্যন্তরিণ সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। এ সড়কগুলো মেরামত করে দিলে আমরা গাড়িতে শুঁটকি লোড দিতে পারব। এতে পরিবহন খরচ কম হবে। 

এ ছাড়া টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানিরও সুব্যবস্থা করতে হবে।' সড়ক যোগা‌যোগ ব‌্যবস্থা নাজুক বল‌লে চ‌লে এখানকার ।

বাঁশখালী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তৌসিব উদ্দিন বলেন, 'এ উপজেলা শুঁটকি মাছের জন্য বিখ্যাত সেটা জেনেছি। এ পেশাকে আরো আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আমি সবেমাত্র কর্মস্থ‌লে যোগদান করেছি। শুঁটকি পল্লীগুলোতে আমি পরিদর্শন ক‌রে তাদের জন‌্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা সহ প্রয়োজনীয় সু‌যোগ সু‌বিধা নি‌শ্চিত করব ব‌লে তি‌নি অ‌ভিমত প্রকাশ ক‌রেন ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়