শিরোনাম
◈ পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কমিটি, সেন্ট মার্টিনে যেতে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের ◈ মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের খরচ ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা ◈ বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ভারতের উত্তর প্রদেশে ৫১৩ মাদ্রাসা বন্ধ ◈ স্ত্রীকে খুন করে গাড়ির ডিকিতে ভরে ১৪৫ কিলোমিটার দূরে ফেলে এলো স্বামী ◈ ফরিদপুরে দেড়শো পরিবার বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে ◈ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যে বার্তা দিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ (ভিডিও) ◈ ‌‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না ট্রাইব্যুনালে’ ◈ দীর্ঘ ১২ বছর পর সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া ◈ নারী ফুটবলারদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিলো বিসিবি

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৫৯ দুপুর
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:২০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভয়াবহ বন্যার তিন মাস

ফেনীতে নিঃস্ব ১৭১৮ পরিবার এখনও কোনো সহায়তা পায়নি

এম. এমরান পাটোয়ারী, ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীতে স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যায় সব হারিয়ে এক হাজার ৭১৮ পরিবার সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নি:স্ব হয়েছেন, দুই মাস ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও তাদের কেউ কোন সাহায্য সহযোগিতা কিছুই পায়নি। গত ২০ আগষ্টের বন্যায় ফেনীতে এক হাজার ৭১৮ টি ঘরবাড়ি সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত ও ছয় হাজার ৯৪১ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেউ সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে সাহায্য সহযোগিতা পায়নি বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: মাহবুব আলম। তিনি বলেন, সরকারীভাবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও ১২ লক্ষ টাকা পেয়েছি, যা প্রায় ১৫০ পরিবারের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। 

এ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ইউএনডিপি, বিডিআরসিএস, আরআইসি, মাস্তুল ফাউন্ডেশান, ওয়াইপিএসএ সহ কিছু সামাজিক সংগঠন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহযোগিতা করেছে।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সুত্রে জানা গেছে, ফেনী জেলার সদর উপজেলায় ৬৭৫টি, ফুলগাজী উপজেলায় ২৯৫ টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২৯৩টি, পরশুরাম উপজেলায় ৩৩৩টি, সোনাগাজতে ৩৭টি, দাগনভুঞা উপজেলায় ৮৫টি ঘরবাড়ি সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো কোন সহযোগিতা না পেলেও গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১১০টি পরিবারকে ঘর করে দিবেন বলে জানিয়েছে। এ ছাড়াও ফেনী সদর উপজেলায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২০৬টি, পরশুরামে আংশিক  ৩৩৩টি , ছাগলনাইয়ায় ৩১৩টি , দাগনভূঞায় আংশিক ৯৮২টি , সোনাগাজীতে ৭৪১টি ও  ফুলগাজিতে ১৩৪৯টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতি পরিবারে ৪ বান্ডিল করে ১৫৭ পরিবারকে ঢেউটিন ও নগদ সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা সহায়তা দিয়েছে ও ফুলগাজী উপজেলায় সেনাবাহিনী/ নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ১০০টি ঘর মেরামত করে দিয়েছে। ইউএনডিপি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩,০০০ পরিবারকে ঘর মেরামত বাবদ মোট ১০কোটি ৩৫লক্ষ টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রেখেছে। বিডিআরসিএস ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবাকে শেল্টার মেটেরিয়্যালস ও কিসেন কিট বিতরণ বাবদ ৮৩ লক্ষ টাকা বিতরণ করেছে। মাস্তুল ফাউন্ডেশন ক্ষতিগ্রস্ত ৯৯২ পরিবারকে হাউজহোল্ড বিল্ডিং মেটেরিয়্যালস বাবদ ১১ লক্ষ ৫০০ টাকা ও আরআইসি ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৫০ পরিবারকে প্রয়োজনীয় হাউজহোল্ড সাপ্লাই বাবদ ৮৮ লক্ষ ৯৮হাজার ৫০০ টাকা বিতরণ চলমান রেখেছে। ওয়াইপিএসএ ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৬০ পরিবারকে আশ্রয় পুনর্বাসন সহায়তার জন্য শত নগদ ১কোটি ৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ১০০ টাকা বিতরণ করছে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক খোকন মিয়ার সর্বনাশী বন্যায় প্লাবিত হয়ে তার বসতভিটাসহ সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচ স্কিমের ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকছেন তিনি। খোকন মিয়া বলেন, ‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। এক বন্যা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ছোট তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দে্র ঠাঁই নিয়েছিলাম। এক মাস হয়ে গেছে কোনো কামকাজ নাই। কী করে ঘর তুলব মাথায় আসছে না। বন্যার তিন মাস হয়ে গেল, অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের পুনর্বাসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।

সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামের আবু তাহের বলেন, পানির স্রোত সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। জীবন নিয়ে কোনো রকমে আশ্রয়কেন্দে্র যেতে পেরেছি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি এসে দেখি কিছুই অবশিষ্ট নেই। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।

ফেনী সদর উপজেলার বিরিঞ্চি এলাকার শামসুন্নাহার নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী বলেন, ঘরবাড়ি সব বন্যায় নিয়ে গেছে। নতুন ঘর  করার সামর্থ্যও নেই। সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা পাই, তাহলে ঘর মেরামত করতে পারব। না হয় ভাঙা ঘরেই থাকতে হবে। তিনি চারদিকে প্লাস্টিক ও উপরে ভাঙ্গা টিন দিয়ে ঝুপড়ি তৈরী করে থাকেন।
ফেনীর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে। গৃহনির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কাজ শুরু করা হবে। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়