শিরোনাম
◈ বাংলাদেশকে কঠোর বার্তা দেবেন ট্রাম্প: মার্কিন নেতা সাজিদ তারার ◈ দেশবাসীসহ সবার কাছে যে অনুরোধ করলেন মেজর জিয়াউলের আইনজীবী বোন নাজনীন(ভিডিও) ◈ এজলাসে হাউমাউ করে কাঁদলেন গুলশান থানার সাবেক ওসি, বললেন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন ◈ আমরা কারও কল রেকর্ড করি না : জিয়াউল আহসান প্রিজন ভ্যান থেকে বললেন (ভিডিও) ◈ ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে সাইন্সল্যাব এলাকায় রণক্ষেত্র (ভিডিও) ◈ সাত কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা কী, জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে কোন সাংবাদিকদের কেমন ভূমিকা ছিল সেটি দেখা হবে : প্রেস সচিব ◈ সেনাবাহিনীর অভিযানে বেরিয়ে আসছে একের পর এক অস্ত্র ও ১৫ লাখ টাকা(ভিডিও) ◈ সড়ক আটকে বিক্ষোভ: ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ (ভিডিও) ◈ কুয়েতে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশের আনাস

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:৩১ দুপুর
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্রাহ্মণপাড়ায় এখনো আর্সেনিকের ঝুঁকিতে মানুষ

ফারুক আহাম্মদ,ব্রাহ্মণপাড়া ( কুমিল্লা ) প্রতিনিধি : দেশব্যাপী প্রথম নব্বই দশকে ভয়াবহ রোগ আর্সেনিক নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর সারা দেশের টিউবওয়েল পরীক্ষা করে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েল সনাক্ত করা হয়। সনাক্ত করা এসব আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলর পানি পান এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়, এবং নিরাপদ পানির উৎস হিসেবে গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। 

তবে আর্সেনিকের উপস্থিতির দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় এখনো ৭৫ হাজার মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয়দের মতে দীর্ঘদিন আর্সেনিক নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এর ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো মানুষ অজ্ঞতাবশত বা নিরূপায় হয়ে পান করছেন আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলের পানি। এতে এ উপজেলায় দিন দিনই আর্সেনিকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্সেনিকোসিস রোগ প্রতিরোধে তেমন কোনো উদ্যোগও দৃশ্যমান নেই।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই ৮ ইউনিয়নের মধ্যে আর্সেনিকের উপস্থিতি আছে এমন এলাকাগুলোর মোট লোকসংখ্যার বিপরীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থাপন করা আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। যার ফলে যেসব এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ নেই সেসব এলাকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। 

এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়ন, মাধবপুর ইউনিয়ন, চান্দলা ইউনিয়ন ও সিদলাই ইউনিয়ন। আশ্চর্যজনক হচ্ছে উপজেলার এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানের মানুষ আর্সেনিক বা আর্সেনিকোসিস রোগ বা এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। 

এ উপজেলায় ২০২০-২০২১ সালে আর্সেনিক সনাক্তের লক্ষ্যে ২০ হাজার টিউবওয়েল পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছিল। এরমধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টিউবওয়েল আর্সেনিকমুক্ত পাওয়া যায়। আর বাকি ৬ হাজার ৫০০ টিউবওয়েলে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ হিসেব অনুযায়ী ব্রাহ্মণপাড়ায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান বা রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। 

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ব্রাহ্মণপাড়ার উপ- সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় যে টিউবওয়েল গুলোতে আর্সেনিক রয়েছে আমরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লাল কালি দিয়ে মার্ক করে দিয়েছি। এসব টিউবওয়েলের পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না। আমরা আমাদের কার্যালয়ে বিনামূল্যে আর্সেনিক পরীক্ষা করে থাকি এবং সাধারণ মানুষদের মাঝে আর্সেনিক ও আর্সেনিকোসিস রোগ সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে আসছি। 

এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্প চালু ছিল। শিগগিরই আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্প ফেজ-২ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এতে গভীর নলকূপের মাধ্যমে নিরাপদ পানি পেলে এ উপজেলায় আর্সেনিকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে আশা করছি। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, আর্সেনিক হল একটি রাসায়নিক উপাদান। এটি একটি ধাতব পদার্থ। এটি পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরের প্রবেশ করে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত করে। এ রোগ মানুষের হাতে, পায়ে বা চামড়ায় পরিলক্ষিত হয়। 

মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ার, হাতে ও পায়ে কালচে বা সাদা দাগ ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির আরও নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত রোগী নিয়মিত ঔষধ ও আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি পান করলে ও ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবারদাবার খেলে এ রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। আমরা আর্সেনিকের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। 

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমাদের কাছে ইউনিয়ন ভিত্তিক ১২টি করে টিউবওয়েল আসে। চেষ্টা করা হয় ডিপিএইচই অফিসের মাধ্যমে বিশেষ করে আর্সেনিকের সন্ধান পাওয়া গেছে এমন এলাকায় স্থাপন না করে তার কাছাকাছি জায়গায় টিউবওয়েল স্থাপনের। যদি টিউবওয়েলগুলো সঠিকভাবে বিতরণ বা সঠিক জায়গায় স্থাপন করা হয় তাহলে সাধারণ মানুষজন আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে পারবে।

ইউএনও বলেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যৌথভাবে এ বিষয়ে প্রচারণার ব্যবস্থা করা উচিৎ। তবে যেসব এলাকায় আর্সেনিকের সন্ধান পাওয়া গেছে সেসব এলাকার মানুষজন যেন আক্রান্ত না হয়ে পড়ে সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি পানিবাহিত বা খাদ্যের মাধ্যমে হয় এমন রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে একটা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়