শিরোনাম
◈ আমি মিডিয়ার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ: হাসনাত আব্দুল্লাহ (ভিডিও) ◈ প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত ◈ ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের পথে যেসব চ্যালেঞ্জের কথা জানাল টিআইবি ◈ টেস্ট অধিনায়ক হয়েই ফিরলেন টেম্বা বাভুমা, দক্ষিণ আফ্রিকার দল ঘোষণা ◈ আজকের পর থেকে আমাকে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক বলবেন না: তারেক রহমান (ভিডিও) ◈ আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ, এখন করছে পাবলিক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ আদালতে আমু, কামরুল ও শাজাহান খানের ব্ক্তব্য নিয়ে নানা মন্তব্য ◈ রাজধানীতে ৩ দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ (ভিডিও) ◈ প্রাকৃতিক সম্পদের শীর্ষে থাকা ধনী ১০ দেশ ◈ দুধ দিয়ে গোসল করে ৩২ মেনে নিয়ে ৩৫ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন শুভ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪৬ দুপুর
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নারীদের তৈরি হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বানানো পণ্য যাচ্ছে বিদেশে

ফরহাদ হোসেন, ভোলা প্রতিনিধি : ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের হাতে তৈরি হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বানানো পণ্য যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সদর উপজেলা, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার নারী বর্তমানে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে দড়ি তৈরি করে।


রাজধানী ঢাকার একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এসব দড়ি দিয়ে অনান্য উপকরণের সহায়তায় ঝুড়ি, বসার মোড়া, পাপোশ, মাদুর, ফ্লোর ম্যাট, ফুলদানি, সোফা সেট, নারীদের হাত ব্যাগ, সৌন্দর্য বর্ধনের নানান সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুত করে বিদেশে রপ্তানি করছে। ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালী, হংকং, জাপান, চায়না, ভারত, জার্মানীসহ ইউরোপ ও মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্যে পাঠানো হয়। সংসারের কাজের পাশাপাশি দড়ি তৈরির বাড়তি আয়ে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে এসব নারীদের পরিবারে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও দড়ি তৈরিতে নারীদের সহায়তা করছেন।


 বিডি ক্রিয়েশন নামে ঢাকার একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভোলায় শুরু হয় হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরির কাজ। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পাওয়া গেলেও বর্তমানে স্থানীয় নারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই কার্যক্রম। দড়ি তৈরি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট পাইকাররা নারীদের বিনামূল্যে হোগলা পাতা সরবরাহ করে থাকেন। প্রতি এক হাজার হাত দড়ির দাম ১২০-১৫০ টাকা করে দেওয়া হয় কারিগরদের। এসব দড়ি নারীদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে পাইকাররা ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। সেখান থেকে হরেক রকম পণ্য তৈরি করে তা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়।


 সদরের চরসামাইয়া এলাকার দড়ির পাইকার মো. সিরাজ মোল্লা জানান, জেলায় প্রায় ৫০ জন পাইকার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা সংগ্রহ করে নারীদের বিনামূল্যে দেন দড়ি তৈরির জন্য। পরে প্রত্যেকের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এসব দড়ি প্রতি হাজার হাত ১১০-১৫০ টাকায় কেনেন। আর তারা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পান হাজার হাত ২১০- ২৫০ টাকা। বর্তমানে নারীদের মাঝে দড়ি তৈরির আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।

বাপ্তার পশ্চিম চরনোয়াবাদ গ্রামের নারী লাকি বেগম ও জাহানারা বলেন, সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা দড়ি তৈরি করে থাকেন। দৈনিক প্রায় ১ হাজার হাত দড়ি তৈরি করা যায়। সংসারে কাজ কম থাকলে আরো বেশি দড়ি বানানো যায়। ভেলুমিয়া চরের নারী রুবিনা আক্তার জানান, পাতাগুলো প্রথমে ২/১ দিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর লম্মা লম্বা এসব পাতাকে ২/৩ ভাগ করে হাত দিয়ে পাকিয়ে দড়ি তৈরি হয়। অনেকেই এখন এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

চরছিফলী গ্রামের গৃহবধূ রেহানা বেগম ও রাবেয়া বেগম জানান, তারা দীর্ঘ ৬ বছর যাবত দড়ি তৈরির কাজ করছেন। কাজের চাপ বেশি থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের কাজে সহায়তা করেন। তবে পরিশ্রম অনুয়ায়ী তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই কাজের মূল্য বাড়ানোর দাবি তাদের।

বিডি ক্রিয়েশন প্রতিষ্ঠানটির ভোলার এরিয়া ম্যানেজার বলেন, আমরা ভোলার বিভিন্ন পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে দড়িগুলো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের কারখানায় হোগলা পাতার দড়ির সাথে অন্য উপকরণের সহায়তায় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী তৈরি হয়। যা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে জেলায় মাসে ১ কোটি ২০ থেকে ৩০ লাখ হাত দড়ি তৈরি হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা অফিসের এজিএম (অপারেশন) রবিউল হাসান বলেন, হোগলা পাতা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য উৎপাদন আমরাই প্রথম তৈরি করছি। এর বাইরেও পাট, বাঁশ, বেতসহ বিভিন্ন পণ্যের সামগ্রী তৈরি করছি। ভোলার প্রত্যন্ত এলাকার একটা বিশাল নারী সম্প্রদায় এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মদক্ষ হয়ে উঠছেন। নারী শ্রমীকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করার বিষয়টি তাদের বিচেনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, জেলায় প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর হোগলা পাতা তৈরি হয়। পাতা দিয়ে দড়ি তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন আমাদের গ্রামীণ নারীরা। এতে করে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। এটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যেগ। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নারীদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়