জাকারিয়া জাহিদ, কুয়াকাটা : উপকূলের গ্রাম বাংলায় শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার উৎসব। ধান কাটায় বাড়ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। কৃষকের স্বপ্ন ভরা সোনালী ক্ষেতে ঘুরে বেড়াচ্ছে কম্পাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। আধুনিক এ ধান কাটা মেশিনের শব্দে বরণ হচ্ছে গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসব। সময় ও খরচ কমাতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
জানা গেছে, সময়োপযোগী কৃষিনীতি আর কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বদলে গেছে দেশের কৃষির চিত্র। আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষিক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা হচ্ছে কম্পাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে শ্যামল বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির কল্যাণে চাষাবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি।
সরকারিভাবে কৃষককে ভতুর্কির মাধ্যমে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। সময়ের বিবর্তনে গ্রামবাংলার কৃষকের ঐতিহ্যবাহী লাঙল-জোয়াল, মই আর হালের বলদ এখন বিলুপ্তির পথে। জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার ও কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা-মাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে এলাকার দরিদ্র কৃষকের সকল প্রকার ফসল চাষাবাদ করতে সময় কম লাগছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ধান ও বিভিন্ন ফসলেরও উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সাধারণ কৃষক ভাগ্যের চাকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষি জমিতে ধান কাটা, ধান রোপণ করা, জমিতে সেচ দেওয়া, ভুট্রা মাড়াই করার কাজেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে আধুনিক পদ্ধতিতে সকল প্রকার চাষাবাদ। একদিকে কৃষকের খরচ কম হচ্ছে, অপরদিকে সময় লাগছে একেবারেই কম।
হারভেস্টার কম্বাইন্ড দ্বারা জমিতে স্বল্প সময়ে শত শত একর জমির ধান কাটা হচ্ছে দ্রুত সময়ে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় এখন নিড়ানি কিংবা আগাছা দমনে শ্রমিকদের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে। তারা অতি সহজে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করছেন। কৃষকের মাঝে আনন্দ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্ধেক ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষককে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের আধুনিক মেশিন বিতরণ করা হয়। এই মেশিনের মাধ্যমে কৃষক অতি সহজেই জমির ধান মাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে পারবেন। এতে তাদের সব কিছুই সাশ্রয় হবে।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবছর উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর। ইতিমধ্যে ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ শেষে অনেক জায়গায় ধান কাটছে হারভেস্টার দিয়ে কৃষকরা। কৃষকদের সহায়তায় প্রণোদনা হিসেবে উপজেলা কৃষি-সম্প্রসারণ দপ্তর হতে আরও জানায়, ঘূর্নিঝড় ’রেমাল’ পরবর্তী কিছু প্রয়োজনে ২০২৩-২৪ কর্মসূচীর আওতায় উপকূলের ১ হাজার ৮ শ’ ৯০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে জন প্রতি ৫ কেজি ধানবীজ ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলার বড়হরপাড়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান জানান, জমিতে চাষাবাদে এখন আর কাঠের লাঙল ব্যবহার করা হয় না। লাঙলের জায়গায় এখন ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক্টর। আগাছা দমন, বীজ বপন ও ফসল কাটতে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় ও শ্রমিক প্রয়োজন হতো। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে শ্রমিক এনে জমিতে কাজ করাতে হতো। কৃষাণ দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে আগে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো। আর বর্তমানে হারভেস্টার দিয়ে কাটতে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
লতাচাপলী ইউনিয়নের আদালতপাড়া গ্রামের কৃষক খোকন কাজী বলেন, ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে প্রতি বিঘায় জমিতে ৫শ’ ৫০ টাকা দিতে হয়। সময় লাগে কম এবং টাকা খরচ হয় কম। তাই আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন সবাই।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রতিটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের দাম ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা । সরকার ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। আর কৃষককে দিতে হচ্ছে বাকি ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পর্যায়ক্রমে আরও মেশিন বিতরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :