শিরোনাম
◈ জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক ◈ ইনিংস ও ১৩৯ রানে ঢাকা মেট্রোকে হারালো সিলেট ◈ হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারল না পাকিস্তান ◈ মারা গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ◈ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে ইমরুলের বিদায়, জানিয়ে গেলেন সরে দাঁড়ানোর বোধশক্তি কথা ◈ সমন্বয়ক হাসনাতকে নিয়ে শিল্পী মাকসুদের পোস্ট, ব্যাপক সমালোচনা ◈ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির দুগ্রুপের সংর্ঘষ, আহত ৪০ ◈ আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে যে কারণে শুনানি করলেন না অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী ◈ ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন নিয়ে নতুন নির্দেশনা ◈ রিপাবলিক বাংলার কনটেন্ট নিষিদ্ধ ও ব্লকের নির্দেশনা চেয়ে রিট

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৫:৪৩ বিকাল
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:১৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৮১ বছর পর কুমিল্লা থেকে নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ

শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা : কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত বুধবার থেকে দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে বাঁকি দেহাবশেষগুলো উত্তোলন করে জাপানে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

৮১ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদেরকে কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের মোট ৭৩৭ জন সৈনিককে সমাহিত করা হয়েছিল। এর আগে, ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তাঁর স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান।

জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে ৭ সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল। তারা সবাই জাপান থেকে এসেছেন। বিশেষজ্ঞ দলটির সাতজনের মধ্যে ছয়জনই জাপানের নাগরিক। তাঁদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার। সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তেই মিলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সৈনিকদের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। সেগুলো অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ার সিমেট্রির উত্তর-পশ্চিম কোণে থাকা সমাধি থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ–গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। আর কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম।

আবদুর রহিম জানান, গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার জাপানের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কুমিল্লায় আসে। এরপর দিন বুধবার সকাল আটটা থেকে তাঁরা কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের  সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানের আছেন ২৪ জন। ফরেনসিক দল এই ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে যাবেন। 

তিনি আরো বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা আছে। আমরা তাঁদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে কবর (সমাধি) শনাক্তকরণ, দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ সরিয়ে আনার কাজটিও করেছেন তিনি। জাপানের প্রতিনিধিদলের পক্ষে পুরো কর্মযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। তিনি আরও বলেন, জাপান সরকার ২০১৩ সালে আমাকে তাদের দূতাবাসে ডেকেছিল এই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওই সময়ে সেটি সম্ভব হয়নি। 

গত বছর থেকে তারা বিষয়টি নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান সরকার আমাদের সরকারের কাছে চিঠি লেখে এবং কমনওয়েলথের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে। এখানে জাপানের পক্ষ থেকে সাতজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন, যাঁরা এ কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাঁদের ছয়জন জাপানি ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো।

এরই মধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি।  দেহাবশেষে কী কী পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ৮১ বছর পর খুব বেশি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিটি সমাধির দুই ফুটের মতো খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে খুঁড়ছি। বাকিটা ম্যানুয়ালি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খনন করা হচ্ছে। কোনোটিতে তিন ফুট, আবার কোনোটিতে ছয় ফুট খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে যা-ই পাচ্ছি, সবকিছুই জাপানের বিশেষজ্ঞ দল যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করছে। 

এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষের কথা বলতে গিয়ে অনেকটাই আবেগাপ্ল–ত হয়ে পড়েন এই বীর প্রতীক। তিনি বলেন, গত শনিবার আমরা এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি। রেকর্ড অনুযায়ী ওই সৈনিকের বয়স ২৮ বছর ছিল। আমার তখন বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করেছে। এত তরুণ বয়সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে সে। এখানে জাপানের সৈনিকদের ২৪ সমাধির মধ্যে ২০টির নাম-পরিচয় আছে। বাকি চারটির পরিচয় শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি। নিশ্চয়ই তাঁরা (জাপানের প্রতিনিধিদল) দেহাবশেষ নিয়ে গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, এ ব্যাপারে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। এরই মধ্যে এক বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক ও ৭ সদস্যের  জাপানি প্রতিনিধি দল আমার সাথে দেখা করেছেন। তারা গত ১৩ নভেম্বর থেকে সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তে শুরু করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়