শিরোনাম
◈ আজারবাইজান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিতে চায় ◈ আইন করে কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি দেওয়া অবৈধ ও অসাংবিধানিক ছিল: হাইকোর্ট ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ◈ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ◈ বরিশাল থেকে ধরে আনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ ◈ ভারতে এসে প্রেম ও বিয়ে, নাগরিকত্ব চাইলেন বাংলাদেশের নারী ◈ বায়ুদূষণ রোধে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায় ভারত ◈ ‘আমি মরে যাইনি, বেঁচে আছি’, লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ ফোন ◈ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহর মৃত্যু ◈ রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক আযান ও ক্বিরাত প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট বিতরণ 

প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:০৬ বিকাল
আপডেট : ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সমুদ্র থেকে ইলিশ শুন্য তীরে ফিরছে জেলেরা,  দাম চড়া

জাকারিয়া জাহিদ, কুয়াকাটা পটুয়াখালী : ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর শেষ হয়েছে সমু্দ্র ও নদনদীতে ২২ দিনের অবরোধ। অবরোধ শেষে অনেক আশা নিয়ে জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়। আশা ছিল কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে তীরে ফিরবে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধানে চষে বেড়ালেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না জালে। হতাশা নিয়ে তীরে ফিরে আসছে জেলেরা। কিছু কিছু ট্রলারে ইলিশ পেলেও তা সাইজে ছোট। বড় ইলিশ নাই বললেই চলে। অন্যান্য মাছও কম ধরা পরছে জালে। সমুদ্রে মাছের আকাল থাকায় ইলিশের দাম এখন আকাশ চুম্বি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
 
জেলেরা জানান, ১ সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের ডাল চাল, মৎস্য সরঞ্জাম সহ ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করে সমুদ্রে মাছ শিকারে গেলেও আশানুরূপ মাছ পাচ্ছেন না তারা। খরচ টাকা উঠছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, আবরোধকালীন সময়ে বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জেলেরা অবাধে মাছ শিকার এবং গত কয়েক বছরে সমুদ্রে ট্রলারের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে জেলেরা মাছ কম পাচ্ছে এমন ধারণা তাদের।
 
জেলে সুমন হাওলাদার জানান, অবরোধ শেষে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে পুরো ১ সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে কাটালেও ইলিশের দেখা মিলছে না। কিছু ইলিশ ধরা পরলেও তা সাইজে ছোট। বড় ইলিশ খুবই কম। সমুন বলেন ইলিশের দাম ভালো থাকলেও মাছ নেই। দাম দিয়ে কি হবে।  অন্যান্য মাছও কম।
খুটা জেলা আল আমিন জানান, সমুদ্রে ইলিশ খুবই কম। অন্যান্য মাছও জালে ধরা পড়ছে না।  ১০-১২ ফার জাল পেতে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার মাছ ধরা পরছে। এতে খরচ উঠছে  না। 
 
জেলে বশির জানান, অবরোধ শেষে আশা ছিল ভালো মাছ পাবো। কিন্তু সমুদ্রে আশানুরূপ মাছ ধরা পরছে না। আমরা জেলেরা সব সময়ই দেনায় জর্জরিত থাকি। দাদন কাটিয়ে উঠতে পারছি না। ছেলে মেয়েদের ভালো পোশাক কিনে দিতে পারছি না। সব সময়ই অভাবের মধ্যে দিন যায়। বশিরের অভিযোগ, সমুদ্রে দেশীয় ট্রলিং জাহাজের পাশাপাশি অবাধে ভারত সহ অন্যান্য দেশের ট্রলিং জাহাজ দিয়ে অবৈধভাবে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করছে। এসব ট্রলারে সমুদ্রের ছোট বড় সব ধরনের মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মাছের প্রজননে বড় বাঁধা এসব অবৈধ ট্রলিং জাহাজ। এছাড়াও বাধা জাল, চিংড়ি জাল বন্ধ না হলে সমুদ্র মাছ শুণ্য হয়ে পড়বে। নৌবাহিনীর টহল জোরদার না থাকার বিদেশি জাহাজে মাছধরা বন্ধ হচ্ছে না। নৌবাহিনী ও মৎস্য অধিদপ্তর সঠিকভাবে দ্বায়িত্ব পালন করলে  এসব বন্ধ হবে। সমুদ্রেও মাছের প্রজনন বাড়বে এমনটাই জানিয়েছেন এই জেলে।
 
কুয়াকাটা মৎস্য আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি বশির হাওলাদার জানান, সমুদ্রে মাছ খুবই কম। পোয়া, বৈরাগী, তুলার ডান্ডি সহ সাদা মাছ কিছু কিছু ট্রলার বা নৌকায় ধরা পরলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আর ইলিশ নাই বললেই চলে। কোন কোন জেলের জালে অল্প কিছু ইলিশ ধরা পরলেও বেশিরভাগ জেলেরাই ইলিশ শুণ্য ঘাটে ফিরছে। যার কারণে ইলিশের দাম চড়া।১ কেজির ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা, আট'শ থেকে নয়'শ গ্রামের ইলিশ ৬০ থেকে ৬২ হাজার, পাঁচ'শ থেকে সাত'শ গ্রামের ইলিশ ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার এবং তিন'শ থেকে চার'শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ হাজার টাকা মন ধরে। যা মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
 
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মিজানুর রহমান জানান, সমুদ্রে গত ১০ বছর পুর্বে যে ট্রলার ছিল বর্তমানে তার দ্বিগুণ মাছধরা ট্রলার হয়েছে। সমুদ্রে জেলে ট্রলার বেশি হওয়ায় মাছ এসব ট্রলারের মাঝে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এতে মনে হয় সমুদ্রে মাছ কম ধরা পরছে। সমুদ্রে মাছ ঠিকই ধরা পরছে। তবে তার দাবী ভারতের সাথে সমন্নয় করে অবরোধ দিলে ভারতীয় জেলেরা অবৈধভাবে মাছ শিকার করতে পারবে না। তাহলে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।
 
এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ফিস এর ইকো ফিস-২ প্রকল্পের  গবেষণা সহকারী সাগরিকা স্মৃতি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্রের পরিবেশ দূষিত হয়ে গেছে। প্লাস্টিক বর্জ সহ শিল্প কারখানার বর্জ্য নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পরছে। যার কারণে মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমছে। অপরদিকে অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরে ফেলছে। বড় হবার আগেই জালে ধরা পরছে। মাছ বড় না হলে প্রজনন হবে কিভাবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের সমুদ্র সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি জেলেদের আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলেই এর সুফল পাবে জেলেরা।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়