এম আর আমিন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) চট্টমেট্রো-দ-১১-০২৩২ নাম্বারে নিবন্ধিত একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রতিষ্ঠানটির জনবল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু একই নিবন্ধন নম্বরে ব্যক্তিমালিকানার আরেকটি গাড়ি শহরের রাস্তায় চলছে। চট্টগ্রাম মেয়রের নামে মালিকানা নিবন্ধিত গাড়ি/ সিএনজি অটোরিক্সা) অন্যের নামে হয়ে যাওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। কাগজপত্র জালিয়াতি করে একটি চক্র অন্যের নামে নিবন্ধন হওয়া ডকুমেন্ট দেখে রীতিমত অবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সমাধানের জন্য চসিকের তদন্ত কমিটিকে সহযোগীতা না করে অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা। এমন অভিযোগ করছেন খোদ তদন্তকারী কর্মকর্তা চসিকের সহকারী প্রকৌশলী ইমাম হোসেন খোকা।
চসিক সুত্রে জানা যায়, চট্টমেট্রো-দ-১১-০২৩২ নাম্বারে প্রাইভেট সিএনজি চালিত অটোরিক্সাটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নামে নিবন্ধিত। ডকুমেন্ট অনুয়ায়ী তিনিই বা চসিক এই গাড়িটির মালিক। নিবন্ধনের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির জনবল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। সম্প্রতি একই নম্বরের (চট্টমেট্রো-দ-১১-০২৩২) আরো একটি গাড়ি রাস্তায় চলতে দেখা যায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে শুরু হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় চসিকের গাড়িটি যথা স্থানে নিয়মিত ডিউটি করে চলছে। এখন প্রশ্ন তাহলে আরেকটি গাড়ি এলো কিভাবে ? খোজ নিয়ে জানা যায় সেই গাড়িটি আব্দুল মতিন রুবেল নামের একজনের নামে মালিকানা পরিবর্তণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম মেট্রো অফিস। অর্থাৎ দুইটি অটোরিক্সা একই নাম্বারে নিবন্ধন করা আবার মালিকও আলাদা। একজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অপর জন আব্দুল মতিন রুবেল। কিন্তু একই নিবন্ধন নম্বরে ব্যক্তিমালিকানার আরেকটি গাড়ি শহরের রাস্তায় চলছে। এই গাড়িটিও বিআরটিএ অনুমোদিত। এর মালিক একজন গ্যারেজ ব্যবসায়ী। এভাবে একটি চক্র সিটি করপোরেশনের একাধিক গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন দেখিয়েছে।
ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৫ মডেলের চট্টমেট্রো-দ-১১-০২৩২ নম্বরের অটোরিক্সাটি ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের নামে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন পায়। আবার ২০২২ সালের বিআরটিএ’র রেকর্ড আপডেটে দেখা যায় একই নিবন্ধন নম্বরের গাড়ির মালিক আব্দুল মতিন রুবেল। যেখানে ইস্যু ডেট লেখা রয়েছে ৩ এপ্রিল ২০০৬ এবং ম্যানুফেকচার ইয়ার ২০০৬। বর্তমানে একই নিবন্ধন নম্বরে দুটো গাড়িই শহরে চলাচল করছে।
তাহলে কি চসিক এই গাড়িটির অবৈধ মালিক ?? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পুল শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল হাসানের সাথে। চসিকের একটি গাড়ির তালিকা দেখে তিনি জানান, চট্ট মেট্রো দ-১১-০২৩২ অটোরিক্সাটি এখনো চসিকের নিজস্ব কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি সচল এবং চলমান। এটি নিলাম বা বিক্রি করা হয়নি। তাহলে এটি অন্যজনের নামে কিভাবে মালিকানা পরিবর্তণ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’আমরা সচরাচর যেসব গাড়ি নিলামে তুলি তা ব্যবহার অনুপযোগী। স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলাম দেয়া হয়, মালিকানা পবির্তণের প্রশ্নই আসেনা। বিআরটিএ কেন, কিভাবে আমাদের গাড়ি অন্যের নামে মালিকানা পরিবর্তণ করেছে তা তারাই বলতে পারবে। যদি অন্যায়ভাবে এমনটি করে থাকে তবে আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
বিআরটিএ’র একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, সাধারণত কেউ কোন গাড়ি বিক্রি করলে সেটার বিপরীতে স্ট্যাম্প/চুক্তিপত্র থাকবে। মালিকানা পরিবর্তণের জন্য চুক্তিপত্রের সাথে একটি হলফনামা বিআরটিএ অফিসে জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয় ব্যক্তি মালিকানা গাড়ি হলে পুর্বের মালিককে সশ্বরীরে বিআরটিএ অফিসে হাজির হতে হবে আর কোন প্রতিষ্ঠানের হলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তণ সম্পন্ন করতে হবে।
এব্যপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ২ টি সিএনজি অন্য কোন ব্যক্তির নামে মালিকানা পরিবর্তণ করেছে বিআরটিএ। একটি হলো চট্ট মেট্রো দ-১১-০২৩২ আরেকটি চট্ট মেট্রো দ- ১১-০০২১। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এই বিষয়ে ১ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যপারে চসিকের এক সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইমাম হোসেন খোকা বলেন, ’আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তাই আমি বিআরটিএ’র চট্টগ্রাম অফিসে যোগাযোগ করি। কয়েকজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছে সিএনজি ২ টি চসিকের নামে নেই। আব্দুল মতিন রুবেলের নামে মালিকানা রয়েছে। একটা প্রিন্ট দেয়ার কথা বলেছিলাম তখন তারা উর্র্ধ্বতন কর্তপক্ষের দোহাই দিয়ে ডকুমেন্ট দেয়নি। আমাকে অফিসিয়াল নোটিশ দিতে বলেছে। পরে আমি তাদের নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তখন তারা বিভিন্নভাবে আমাকে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। বিষয়টি আমি চিফ স্যারকে জানিয়েছি। চিফ স্যার বিআরটিএর বিভাগীয় পরিচালক মো. মাসুদ আলমের সাথে কথা বলেছেন। তিনিও ডকুমেন্ট দিয়ে সহযোগীতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে আমি অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা আমাকে ডকুমেন্টস দেয়নি। গাড়িগুলো আমাদের এবং ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে। আমি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবে।এবিষয়ে জানতে বিআরটিএ চট্ট মেট্রো সার্কেল ২ এর ডিডি আইনুল হুদা বলেন, আমরা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিনা। ডকুমেন্ট অনুযায়ী আমি তদন্ত কমিটিকে সহযোগীতা করব। গাড়িগুলো অনলাইন থেকে সাসপেন্ড আছে। ফাইলটা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর আমাদের অফিসে একবার আগুন লেগেছিল। তখন পুড়ে গেছে কিনা আমরা তা খুজে দেখছি। পাওয়া গেলে আমরা তাদের কাছে পাঠাবো।
আপনার মতামত লিখুন :