জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য একে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর নেতৃত্বে দলের কর্মীদের হাতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে হারুন রশিদের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফোনে ফোনে ছড়িয়ে পড়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসনিক শাখা থেকে জানা যায়, গত অক্টোবরে হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের জন্য ছয়টি গ্রুপে প্রায় ৫ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ টেন্ডারে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেন।
এতে জেলা বিএনপির সদস্য একে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর ‘পছন্দের প্রতিষ্ঠানও’ অংশ নেয়। তবে তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান কয়েকটি গ্রুপের কাজ পেলেও সবগুলো পায়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে তিনি একদল যুবককে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদের কক্ষে গিয়ে সবগুলো গ্রুপের কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান।
এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে থাকা লোকদের তিনি তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত করার নির্দেশ দেন।
হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা ছোটলু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে তার কক্ষ ত্যাগ করছেন। এর পরপরই ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ। তিনি ঢুকেই তত্ত্বাবধায়ককে শাসাতে থাকেন।
এর মধ্যেই ছোটলুর নেতৃত্বে আরো ৭-৮ জন ফের কক্ষে ঢুকেন। সেখানে ছোটলু ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে ছোটলু তত্ত্বাবধায়কের তার চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিতে হাবিবুল্লাহকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মত এগিয়ে গেলে তত্ত্বাবধায়কও হাবিবুল্লার জামার কলার ধরে আত্মরক্ষা করেন।
এ সময় দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। পরে হাসপাতালের কর্মীরা এগিয়ে গেলে ছোটলু তার লোকজন নিয়ে চলে যান।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ টুলু বলেন, ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে তিনি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যান।
এ সময় বিএনপি নেতা ছোটলুর নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দুজন তত্ত্বাবধায়ককে তার চেয়ার থেকে তুলে আনতে যেতে দেখতে পান।
পরে তত্ত্বাবধায়ক আত্মরক্ষার্থে একজনের জামার কলার চেপে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সবাই এগিয়ে গেলে ছোটলু তার লোকজন নিয়ে চলে যান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, “ছোটলু সাহেব যশোর জেলা বিএনপির নেতা। সম্প্রতি একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। তিনি সেই টেন্ডারের কয়েকটি গ্রুপে দরপত্র জমা দেন। সব ক’টি না পাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হন। পরে তার উপস্থিতিতে তার লোকজন আমার চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে আসে।
“তখন আমিও আমার সম্মান রক্ষার্থে সেই ছেলেটিকে আটকাতে চেষ্টা করি। এ ঘটনা ডিসিকে জানানো হয়েছে। তিনি পরে যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন; সেটাই করা হবে।”
ফোনে হাসপাতালের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু বলেন, “আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা আছে; তবে হাসপাতালে কোনো টেন্ডার জমা দিইনি। তার কাছে আমার একটি কাজ ছিল তাই গিয়েছিলাম।”
“হাবিবুল্লাহর সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা থাকতে পারে। তাই তাদের দুজনের ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমি বিষয়টি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি”, এ বিএনপি নেতা।
আপনার মতামত লিখুন :