ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন দুই ভাইকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আওয়াল কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। নিহত দুই ভাইয়ের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে নিহতদের দাফন সম্পন্ন হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে। সেই সাথে ওই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
এর আগে ৩০ অক্টোবর বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামের বাজারে পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন দুই ভাইকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় আরও আহত হয়। আহত দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন দৌলতপুর উপজেলার ছাতারপাড়া গ্রামের রমজান মণ্ডলের ছেলে হামিদুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর ছোট ভাই নজরুল ইসলাম (৪৫)। হামিদুল পেশায় কৃষক। তাঁর ভাই কৃষক ও মৌসুমি ব্যবসায়ী। তাঁদের লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের শেষে নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাদ আছর নিহত দুই ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতারপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থক গাইন বংশ এবং বিএনপির সমর্থক পিয়াদা বংশের মধ্যে তিন যুগের বেশি সময় ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এদের বর্তমানে পিয়াদা বংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গাদি নামে এক ব্যক্তি। আরেক পক্ষ নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নিহত হামিদুল ইসলাম। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামিদুলরা এলাকার বাজারে তেমন যেতেন না।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে হামিদুল ও তাঁর ভাইসহ কয়েকজন এলাকার বাজারে যান। এ সময় আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া গাদিসহ তার অনুসারী ইন্তা মালিথা ও সুমন পিয়াদাসহ ১০–১২ জন দেশি অস্ত্র নিয়ে বাজারে তাঁদের ঘিরে ধরেন। হামিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। তাঁদের রক্ষা করতে গেলে আরও দুজনকে জখম করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় আসমত আলী (৪৫) ও জামাল হোসেনকে (৩২) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও প্রতিপক্ষ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপারেশন ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এলাকায় মিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেককে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
আপনার মতামত লিখুন :