মো: সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) সিনিয়র লেকচারার ডাক্তার শায়লা সুলতানা ঝুমার বিরুদ্ধে গাইনোকলজিষ্ট না হয়েও হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপারেশনের মত জটিল অপারেশন এবং অফিস টাইমে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখার অভিযোগ ওঠেছে। গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগ নেতাদের ও স্বাচিপের নেতাদের ম্যানেজ করে নোয়াখালী জেলার মধ্যে বিভিন্ন পোস্টে চাকুরী করে আলাদা সুবিধা গ্রহণ করেন করা এই ডাক্তার দফায় দফায় পেয়েছেন পদোন্নতি।
গত ৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি নিজেকে বৈষম্যের স্বীকার বলে দাবি করেন। এ নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে সৃস্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। (ম্যাটস) নোয়াখালীর একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারী চাকুরীর নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকার কথা থাকলেও ডাক্তার শায়লা সুলতানা ঝুমা প্রতিদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই বের হয়ে যান এবং অফিস টাইমে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগী দেখা এবং সিজারিয়ান অপারেশন ও জরায়ু অপারেশন করেন।
বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নিরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করছেন ম্যাটস কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ম্যাটস’র শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ম্যাটস এ কর্মরত শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, ডাক্তার ঝুমার কথায় অবাধ্য হলে শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন তিনি। তাই ভয়ে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০১১-১২ সালের দিকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে নোয়াখালী ২৫০ শয্য জেনারেল হাসপাতালে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে পদায়িত হন শায়লা সুলতানা ঝুমা, পরে একই কর্মস্থলে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) হিসেবে যোগদান করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। স্বাচিপের জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে তাদের সুপারিশে ২০১৯ সালের দিকে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদে দায়িত্ব পান এই ডাক্তার। পরে ২০২১ সালে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়িত হন।
২০২২ সালে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ডিও লেটারে মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এর সিনিয়র লেকচারার পদায়ন পান শায়লা সুলতানা ঝুমা। ম্যাটস শিক্ষক এবং নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একাধিক গাইনি ডাক্তার অভিযোগ করে জানান, ডাক্তার শায়লা সুলতানা ঝুমা গাইনোকলজিষ্ট না হয়েও হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপারেশনের মত জটিল অপারেশন করে থাকেন। যার ফলে বিভিন্ন সময় রোগীর অপুরনীয় ক্ষতি হয়। এই ব্যাপারে গাইনোকলজিষ্ট চিকিৎসকদের সংগঠন (ওজিএসবি) ও সিভিল সার্জন থেকেও ডাক্তার ঝুমাকে এসব অপারেশন না করার জন্য নিষেধ করা হয়।
কিন্তু তিনি তা মানছেন না। অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডাক্তার শায়লা সুলতানা ঝুমার মুঠোফোনে শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫ টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে একাধিকবার কল করলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি।
গাইনোকলজিষ্ট চিকিৎসকদের সংগঠন (ওজিএসবি) নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ডা. আবু নাছের জানান, এক বছরের ট্রেনিং থাকলে সিজার অপারেশন করতে পারবে তবে হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপারেশন করার জন্য পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি লাগবে। পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি ছাড়াও কিছু ডাক্তার জরায়ু অপারেশন করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমরা এসব সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি, সিভিল সার্জন নির্দেশনা দিয়েছেন, তবে ওনার নির্দেশনা এসব ডাক্তাররা মানছে না।
ডা. আবু নাছের আরো জানান, ডাক্তার শায়লা সুলতানা ঝুমার পোস্ট গ্রাজুয়েশন না থাকায় সিভিল সার্জন তাকে জরায়ু অপারেশন করতে একাধিকবার নিষেধ করেছেন, যার কপি আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু তিনি তা পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা কয়েকজন ভিতরে ভিতরে এই অপারেশন করছে বলেও জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, সরকারিভাবে বলা আছে এক বছর ট্রেনিং থাকলে সিজার করতে পারবে। তবে জরায়ু অপারেশনের জন্য অবশ্যই পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি লাগবে। এরপরেও যদি কেউ পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি ছাড়া অপারেশন করে, তবে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অফিস টাইমে কিভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তার শায়লা সুলতানা ঝুমা এমন প্রশ্নে ম্যাটস নোয়াখালীর অধ্যক্ষ ডাঃ বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না, তবে কেউ আমাকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি। যদি অভিযোগ করে তাহলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :