শিরোনাম
◈ ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার চোরাচালানী মালামাল জব্দ করেছে বিজিবি ◈ আজারবাইজানকে "ভাল বন্ধু" হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ এখনো ১০১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ, ইনিংস পরাজয় এড়াতে লড়ছে শান্তরা ◈ কোটি টাকার স্পন্সর পেলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ◈ এ সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম (ভিডিও) ◈ সুখবর: প্রাথমিকে ৯৫৭২ সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি, আছে শর্ত ◈ পদত্যাগ করা সমন্বয়কদের নতুন সংগঠনের নাম ঘোষণা, বললেন আবারও রক্ত ঝরাতে প্রস্তুত ◈ ব্যয় কমাতে কমনওয়েলথ গেমস থেকে বাদ পড়লো ক্রিকেট ◈ আরেক দফা বাড়ছে নীতি সুদহার, বাড়বে সব ধরনের সুদ ◈ লন্ডনে আলিশান বাড়িতেই আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, আমিরাতে আরও ৩০০ বাড়ির সন্ধান (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:২৭ দুপুর
আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভোলায় মহিষ পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন হাজারো চাষী

ফরহাদ হোসেন, ভোলা প্রতিনিধি: ধান সুপারি আর ইলিশের গোলা এই তিনে দ্বীপ ভোলা জেলা। এছাড়া ভোলার অনন্য ঐতিহ্য ‘মহিষ পালন’। জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বিছিন্ন দ্বীপ চরগুলোতো মহিষ পালনের পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রায় দুইশো বছর ধরে মহিষ বাতান আকারে পালন করে আসছেন চাষীরা। প্রতিটি মহিষের বাতানে  দু’শ থেকে হাজার পর্যন্ত মহিষ পালন হয়ে থাকে। যা ঘরোয়া পরিবেশে একেবারেই অসম্ভব। 

কিন্তু বর্তমানে এ মহিষ পালন অধিক লাভজনক হওয়ায় স্থানীয়রা বসত বাড়ির গোয়ালঘরে পালন শুরু করেছেন। মহিষ পালনের ব্যাপকতায় এলাকার দরিদ্র কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়ে উঠছেন। একদিকে মহিষ বিক্রি অন্যদিকে মহিষের দুধ বিক্রির টাকায় চাষীরা দেখছেন দিন বদলের স্বপ্ন।

জানা গেছে, জেলার ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বিচ্ছিন্ন চর রয়েছে। এসব চরে সরকারি হিসেবে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মহিষের হিসেব থাকলেও সংখ্যায় প্রায় ২ লক্ষ মহিষ রয়েছে। ৯৭ টি মহিষের বড় বাতান (খামার) সহ প্রায় ৭০৫  দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লিটার দুধ আসে। এসব দুধ ও দুধের তৈয়ারি দই দিয়ে জেলার ২১ লক্ষ মানুষের চাহিদা ফিলাপ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা পুরণ করছে। নদীর মাঝখানে এসব চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এলাকা জুড়ে সবুজ ঘাসের সমারোহ। আর এসব চরে পালন করা হয় হাজার হাজার মহিষ। সবুজ ঘাস খেয়ে পালিত হয় এসব মহিষ। যুগ যুগ ধরে বংশপরপ্রমাক্রমে বহু পরিবার এখানে মহিষ ও দই বিক্রির পেশায় নিয়জিত রয়েছেন। 

অনেকে আবার নিজস্ব মহিষের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে দই তৈরি করেন। দই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরে গড়ে উঠেছে শত শত মহিষ নিয়ে বাতান। প্রতিদিন সকালে বেলা বাড়ার সাথে সাথে এসব বাতান থেকে মণে মণে দুধ আসতে শুরু করে শহর ও বাজারগুলোতে। গ্রামাঞ্চলে হাটের দিনে মহিষা দই এর টালির পসরা সাজিয়ে বসেন অনেক বিক্রেতারা। বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় মহিষের দুধের দই। প্রায় ১২২০ সালে বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেগে উঠে দ্বীপ জেলা ভোলা। এরপর এখানে গত ৪০০ বছর ধরে ক্রমশই জনবসতি গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তারা মহিষ, গরু, ছাগল পালন শুরু করেন। ভোলা দ্বীপ হওয়াতে এখানকার ছোট বড় অসংখ্য চরে মহিষ পালনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষ করে অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থ পরিবারগুলোর শত শত মহিষ পালন করে।

স্থানীয়দের ধারণা, প্রায় ২০০ বছর ধরে এই জেলায় মহিষের দুধ থেকে কাঁচা দই উৎপাদন শুরু করে। যা ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়ে বর্তমান সময়েও জনপ্রিয়। এখানে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ এমন কোন অনুষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়নি।

মহিষ পালনকারী ভোলার চরের আব্দুল রশিদ বলেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০১ সালে চারটি মহিষ নিয়ে যাত্রা শুরু করি। এখন আমার ৪১টি মহিষ। বর্তমানে তার দুই একর জমি হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। এ মহিষের দুধ বেঁচে তিনি তার সংসারের খরচ মেটান। ভোলায় এখন মহিষ পালনে চরাঞ্চলের সবাই ঝুঁকছে। এতোদিন শুধু বাতানে পালন হলেও এখন তা বাড়িতে বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশেও পালন হচ্ছে। মহিষ পালনে দিন বদলের এ গল্প জেলার অনেক কৃষকের।

মহিষের বাতান মালিক জাকির হাওলাদার বলেন, তার ৯৫টি মহিষ রয়েছে। এটা আমার দাদা পালন করেছে। তারপর চাচা পালন করেছে, এখন আমি করছি। তবে আগে মহিষ একটু কিছু না হতেই মরে যেত। তাই অনেকে বেশি পালন করতে চাইতো না। কিন্তু এখন কৃমি নাশক ওষুধ ও বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণে মহিষ মারা যাওয়ার ঝুঁকি কমেছে। অন্যদিকে মাংস ও দুধের দাম বাড়ার কারণে লাভের পরিমানও বেড়েছে। তাই অনেকের মতো আমারও বেশি মহিষ পালনের আগ্রহ বেড়েছে। আমি এ মহিষ পালন করে প্রায় ৫ একর জমি কিনেছি।

মহিষের বাতানের মালিক মো. ইউনুছ বলেন, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে তাদের বাতানে প্রায় আড়াই শত মহিষ রয়েছে। যা তারা চার পুরুষ ধরে লালন করে আসছেন। দৈনিক এখান থেকে ১৩০ থেকে ১৫০ কেজি দুধ হয়। জেলায় অনেকেই ঐতিহ্য ধারণ করে মহিষ পালন করে আসছেন। যা তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।


স্থানীয় দই বিক্রেতারা বলেন, সাধারণত দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের দই (টালির) চাহিদা বেশি। বর্তমানে দেড় কেজি ওজনের দধি ২০০ ও দুই কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দই থেকে মাখন, ঘি ও ঘোল বানানো হয়। মাখনের কেজি ৯০০ ও ঘিয়ের কেজি ১২ শত ১৪ শত টাকায় বিক্রি হয়। এর ভালো দাম পাওয়ায় তাদের লাভও ভালো হয়। তবে দুধের দাম বৃদ্ধি পেলে দইর দামও বাড়ে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ভোলা সরকারী হিসেবে জেলায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মহিষ রয়েছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লিটার দুধ আসে। এসব গুলোই জলা মহিষ, এসব মহিষ পালন করে  তারা মাংস ও দুধ উৎপাদনের জন্য। আমাদের মুদ্রাজাতের মহিষ উৎপাদনের জন্য বাগেরহাট ও টাংগাইলে ২ টা মহিষ প্রজোনন খামার আছে। সেখান থেকে ভোলাতে আমরা ১৫০টির মত চেলা মহিষ বিতরণ করেছি, এই চেলা মহিষ দিয়ে বাতানের মহিষগুলোকে কোড়াছ করে উন্নত জাতের মুদ্রাজাতের মহিষ উৎপাদনের জন্য কাছ করছি যাহাতে প্রতিটি মহিষ প্রথম থেকেই ১০ থেকে ১৫ কেজি দুধ উৎপাদন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা ভোলা জেলায়  ১০০ একর জমির উপর ডি এল আরই ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রাণালয়ের যৌথ উদ্দ্যেগে উন্নত মুদ্রাজাতের মহিষ উৎপাদনের খামার করার কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি ভোলার মহিষের বাতান মালিকরা খুব শিগ্রই এর সুফল পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়